ফুটপাথে চিকিৎসা
কলকাতার ফুটপাথে বসে প্রেসার ও সুগার মাপছেন তপন দাস। ডাক্তারি না জানা সত্ত্বেও তিনি মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে যাচ্ছেন দীর্ঘ তিন দশক ধরে। ফুটপাথের এই চেম্বারটিকে নিজের জীবনশিল্পে পরিণত করেছেন তিনি।
তপনের জীবনের শুরুটা ছিল সংকটময়। বাবার চাকরি সূত্রে মেদিনীপুর থেকে হাওড়ায় আসা গোপাল দাস খুব একটা লেখাপড়ার সুযোগ দেননি। তবুও, তপন তাঁর ইচ্ছাশক্তির জোরে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পান। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর ১৮-১৯ বছর বয়সে এক চিকিৎসকের সহকারীর কাজ পান। সেখানে তিনি রক্তচাপ এবং ব্লাড সুগার মাপার কৌশল শিখে নেন। একদিন ভাবলেন, “কেন না কলকাতার রাস্তায় এই কাজ করা যায়?”
১৯৯২ সালে তিনি বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে ফুটপাথে নিজের ‘চেম্বার’ শুরু করেন। শুরুতে ২ টাকা এবং ৫ টাকায় প্রেসার ও সুগার মাপতেন। এখন ২০ টাকা ও ৫০ টাকায় এই পরিষেবা দেন। তাঁর এই উদ্যোগ এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি দফতরের কর্মীরা তাঁর কাছে আসেন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে।
তপনের ফুটপাথের চেম্বারটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। একটি টেবিল, পাশে একটি টুল এবং দুটি চেয়ার—এটাই তাঁর কাজের জায়গা। গায়ে লেখা ‘ব্লাড সুগার চেক, ব্লাড প্রেশার চেক’ বোর্ডটিও অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এখানেই যাতায়াতকারী অফিসকর্মীরা এসে প্রেসার এবং সুগার মাপতে আসেন। তবে করোনার কারণে তাঁর গ্রাহক সংখ্যা কিছুটা কমেছে, কারণ অনেকেই বাড়িতে যন্ত্র কিনে নিয়েছেন।
তপন সাপ্তাহিক ছুটি রবিবারে নেন। সরকারি ছুটির দিনে, বিশেষ করে ২১ জুলাই, তৃণমূলের সমাবেশের দিন ফুটপাথে বসতে দেওয়া হয় না। কিন্তু অন্যান্য দিনগুলোতে তিনি নিয়মিতভাবে নিজের চেম্বার খুলে রাখেন।
“আমি কাউকে ওষুধ খেতে বলি না। তবে যখন প্রেসার বা সুগারের ফল ‘খারাপ’ হয়, তখন চিকিৎসকের কাছে যেতে বলি,” তপন জানালেন।
তাঁর স্বপ্ন, সবাই যেন সুস্থ থাকে এবং নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয়। আজ তাঁর ছেলে শুভমও বাবার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, ফলে পরিবারের আর্থিক অবস্থা কিছুটা ভালো হয়েছে। তপন দাসের গল্প শুধু একজন ফুটপাথের স্বাস্থ্যকর্মীর নয়; এটি একটি অধ্যায় সংগ্রামের, আত্মবিশ্বাসের এবং মানুষের সেবার।