Monday, December 1, 2025

ফিরে আসার প্রত্যয়ে প্রজ্ঞানন্দ: গুকেশের মতো সাফল্যের স্বপ্নে বিভোর

Share

প্রজ্ঞানন্দ

ভারতের দাবায় একসময় নতুন তারকাদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম ছিল রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। বয়স মাত্র ১২ হলেও গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন তিনি। এমনকি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনকেও হারিয়ে চমক তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের দাবা অঙ্গনে গুকেশ এবং অর্জুন এরিগাইসির মতো প্রতিভাবানরা নজর কেড়েছে, আর প্রজ্ঞানন্দ যেন কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন। যদিও প্রতিদ্বন্দ্বিতার এই কঠিন সময়ে প্রজ্ঞানন্দ দমে যাননি। বরং আনন্দবাজার অনলাইনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, পিছিয়ে পড়লেও তিনি হাল ছাড়ছেন না এবং একদিন গুকেশের মতো সাফল্যের কাতারে পৌঁছাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

চালাকিতে পিছিয়ে, কিন্তু প্রত্যাবর্তনের লড়াইয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ

প্রজ্ঞানন্দ জানেন, তিনি গুকেশের জায়গায় থাকতেই পারতেন। কিছুটা হতাশা থাকলেও তিনি গুকেশের জন্য গর্বিত এবং এই আসন্ন বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে দেখে উচ্ছ্বসিত। “হ্যাঁ, আজ আমিও গুকেশের জায়গায় থাকতে পারতাম,” বললেন প্রজ্ঞা, “কিন্তু পারিনি। গুকেশ পেরেছে এবং আমি ওর জন্য গলা ফাটাব।”

চলতি বছর জানুয়ারিতে প্রজ্ঞানন্দ ভারতের এক নম্বর দাবাড়ু হয়েছিলেন, কিন্তু তার পরেই ফিডে ক্রমতালিকায় পিছিয়ে পড়েছেন। বর্তমানে ভারতের শীর্ষ পাঁচে তিনি পঞ্চম স্থানে, যেখানে অর্জুন এরিগাইসি শীর্ষে, গুকেশ দ্বিতীয়, বিশ্বনাথন আনন্দ তৃতীয় এবং বিদিত গুজরাতি চতুর্থ। প্রজ্ঞানন্দ নিজেও জানেন যে ভারতের দাবায় এখন প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “এখন প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। অর্জুন, গুকেশ, বিদিত—এরা সবাই খুব ভালো দাবাড়ু। সবাই সবার থেকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।”

দাবা অলিম্পিয়াডে সাফল্য ও আত্মবিশ্বাস

গত বছর দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে কার্লসেনের কাছে অল্পের জন্য হেরে যাওয়ার পরেও প্রজ্ঞানন্দের জন্য একটি বড় সাফল্যের মঞ্চ ছিল দাবা অলিম্পিয়াড। ভারতের হয়ে সাফল্য অর্জন করে দলটি চ্যাম্পিয়ন হয়, আর প্রজ্ঞানন্দ এতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। দাবা অলিম্পিয়াডে সাফল্য প্রজ্ঞানন্দের আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, “দাবা অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, যা ভারতের দাবাড়ুদের সামর্থ্যের পরিচায়ক। আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়েছে।”

দাবার জগতে পয়েন্ট কম-বেশি হওয়াটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার, আর প্রজ্ঞানন্দ জানেন, সামনের দিনে সাফল্য অর্জনের সুযোগ আসবে। কলকাতার ‘টাটা স্টিল চেস ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতা তার ফেরার পথে সহায়ক হতে পারে বলে আশাবাদী প্রজ্ঞানন্দ। এই প্রতিযোগিতায় কার্লসেনের মতো কিংবদন্তির উপস্থিতি তাদের উভয়ের একাগ্রতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার শক্তি প্রদর্শন করেছে। প্রথম রাউন্ডেই কার্লসেনের বিপক্ষে খেলতে নামবেন প্রজ্ঞানন্দ এবং এই ম্যাচটি তার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

প্রজ্ঞানন্দের প্রেরণা এবং প্রতিশ্রুতি

প্রজ্ঞানন্দের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ তার দিদি বৈশালী। বাবা বৈশালীকে টিভির আসক্তি থেকে দূরে রাখতে দাবা শেখাতে শুরু করেন, আর বৈশালীর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই প্রজ্ঞানন্দ দাবার প্রতি আকৃষ্ট হন। সেই থেকেই তার যাত্রা শুরু। ছোটবেলা থেকেই বিশ্বনাথন আনন্দকে নিজের গুরু মেনে চলেছেন এবং পরিশ্রম করতে তিনি কখনো পিছপা হননি।

প্রজ্ঞানন্দকে বলা হয় রজনীকান্তের ভক্ত, আর তার মনোবল যেন সেই নায়কের মতোই দৃঢ়। প্রজ্ঞানন্দ কখনোই হাল ছাড়েন না এবং তার প্রত্যয়ী চেহারায় দৃঢ়সংকল্প ফুটে ওঠে। কলকাতার এই প্রতিযোগিতা থেকেই তার প্রত্যাবর্তনের সূচনা করতে বদ্ধপরিকর তিনি। এ জন্য এই প্রতিযোগিতায় ভালো পারফর্ম করাটাই তার প্রথম লক্ষ্য, আর এ যুদ্ধে তিনি জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।

Read more

Local News