ফার্টিলিটি ক্লিনিকের মারাত্মক ভুল!
সন্তান জন্মের আনন্দ কতটা মূল্যবান, তা যে কোনও মায়ের কাছেই অমূল্য অভিজ্ঞতা। কিন্তু যদি জানা যায়, সেই সন্তান আসলে জিনগত ভাবে আপনার নয়? এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে আমেরিকার ক্রিস্টেনা মারের সঙ্গে।
তিনি এবং তাঁর নির্বাচিত শুক্রাণুদাতা দু’জনেই ফর্সা, অথচ সন্তান কৃষ্ণবর্ণ! এরপরেই তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর গর্ভে অন্য কারও সন্তান প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। মারাত্মক এই ভুলের জন্যই ফার্টিলিটি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনি।
সন্তান চেয়ে আইভিএফ পদ্ধতির পথ বেছে নিয়েছিলেন ক্রিস্টেনা
৩৮ বছর বয়সি ক্রিস্টেনা বহুদিন ধরেই মা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার কারণে তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক উপায়ে সন্তানধারণ সম্ভব ছিল না। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি আইভিএফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) পদ্ধতির সাহায্য নেন।
এই প্রক্রিয়ায় তিনি এমন একজন শুক্রাণুদাতা বেছে নেন, যিনি তাঁর মতোই ফর্সা এবং শারীরিক গঠনে মিল রয়েছে। সব কিছু নিখুঁতভাবেই চলছিল, সন্তান জন্মের আগপর্যন্ত।
সন্তান জন্মের পরই সামনে এল বিভ্রান্তিকর সত্য
ক্রিস্টেনা যখন প্রথমবার তাঁর সন্তানকে কোলে নিলেন, তখন তাঁর আনন্দ ছিল অপরিসীম। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পারেন, কিছু একটা ভুল হয়েছে। কারণ, তাঁর সন্তান তাঁর বা তাঁর নির্বাচিত শুক্রাণুদাতার মতো দেখতে নয়। বরং শিশুটির গায়ের রঙ কৃষ্ণবর্ণ।
প্রথমে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব না দিলেও, ক্রিস্টেনার মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে। সন্তানের জিনগত পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ডিএনএ পরীক্ষায় ধরা পড়ল ভয়ংকর ভুল
ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল হাতে আসার পরই সত্যিটা পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে যায়। সন্তানের শরীরে তাঁর কোনও জিন নেই! অর্থাৎ, যাঁর শুক্রাণু দিয়ে চিকিৎসকরা নিষেক করেছিলেন, সেটিও ভুল ছিল।
এতে বোঝা যায়, ফার্টিলিটি ক্লিনিকের এক চরম অবহেলার শিকার হয়েছেন তিনি। কোনও কারণে তাঁর গর্ভে ভুল শুক্রাণুর নিষেক করা হয়েছিল, যা সম্পূর্ণ অন্য এক দম্পতির ছিল।
কোলের সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হলেন ক্রিস্টেনা
সন্তানের প্রতি ভালোবাসা থাকলেও বাধ্য হয়ে প্রকৃত বাবা-মার হাতে শিশুটিকে তুলে দিতে হয় ক্রিস্টেনাকে।
তিনি বলেন,
👉 “আমি যখন প্রথম সন্তানের মুখ দেখি, মনে হয়েছিল আমার পৃথিবীটাই বদলে গেছে। কিন্তু পরে যখন বুঝতে পারলাম সত্যিটা, তখন যেন সবকিছু ভেঙে পড়ল। সন্তানের শরীরে আমার এক ফোঁটা রক্তও নেই, আমার সঙ্গে তার কোনও জিনগত সম্পর্ক নেই। কিন্তু তাও সে আমার সন্তান ছিল, আর সারাজীবন থাকবে।”
এই ঘটনার পরেই আইনি পথে হাঁটেন তিনি এবং ফার্টিলিটি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ফার্টিলিটি ক্লিনিকের সাফাই
ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট ফার্টিলিটি ক্লিনিকের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং তাঁদের ক্লিনিকে আগে এমন কিছু কখনও ঘটেনি।
তবে ক্রিস্টেনার আইনজীবীরা বলছেন, এমন ঘটনা যে আরও অনেক মহিলার সঙ্গে ঘটেনি, তার কি কোনও নিশ্চয়তা আছে?
শেষ কথা
মা হওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য ক্রিস্টেনা যে পথ বেছে নিয়েছিলেন, সেটি এখন তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, ফার্টিলিটি ক্লিনিকগুলোর কতটা সাবধানতা ও সতর্কতার প্রয়োজন। এক মুহূর্তের ভুল কোনও মায়ের মাতৃত্ব কেড়ে নিতে পারে, আর একটি শিশুকে তার প্রকৃত পরিবার থেকে দূরে ঠেলে দিতে পারে।
ক্রিস্টেনার লড়াই কি কেবল তাঁর একার? নাকি এই ঘটনা আরও অনেক নারীর জন্যই একটা কঠিন প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে? তার উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ।
গবেষণার আড়ালে সামরিক পরিকল্পনা? সমুদ্রের গভীরে চিনের রহস্যময় কেন্দ্র ঘিরে উদ্বেগ