ফাঁসির সাজা থেকে যাবজ্জীবন
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে অযৌক্তিক দেরি হলে, তা অভিযুক্তের সংবিধান-স্বীকৃত অধিকার লঙ্ঘন করে। এমন পরিস্থিতিতে ফাঁসির সাজা বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তর করায় কোনও ভুল নেই বলে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই মন্তব্য করে। বিচারপতি এস. ওকা, বিচারপতি আহসনউদ্দিন আমানুল্লাহ এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহ্র বেঞ্চ একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানিতে জানায়, ফাঁসির সাজা কার্যকরে দেরি হলে তা আসামির মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ফাঁসির পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া অন্যায্য নয়।
প্রাণভিক্ষার প্রক্রিয়া এবং দেরির প্রভাব
শীর্ষ আদালত জানায়, ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হলে তাদের অবশ্যই তা জানানো উচিত। প্রাণভিক্ষার আবেদন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করে রাখা এক ধরনের মানসিক নির্যাতন। এই পরিস্থিতি একজন ফাঁসির আসামির জন্য অত্যন্ত মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিচারপতিরা আরও বলেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দায়িত্ব যাঁদের উপর রয়েছে, সেই সংস্থাগুলিরই এই দেরির জন্য দায়ী হওয়া উচিত। সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষকে এর দায়ভার দেওয়া সঠিক নয়।
২০০৭ সালের গণধর্ষণ মামলা
২০০৭ সালের একটি গণধর্ষণের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট এই পর্যবেক্ষণ দেয়। ওই মামলায় অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে দেরি হওয়ায় বম্বে হাই কোর্ট ফাঁসির সাজা বদলে ৩৫ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়।
হাই কোর্টের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানানো হলে শীর্ষ আদালত জানায়, ফাঁসির সাজা কার্যকরে দেরি হলে তা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত সঠিক।
দেরি আটকাতে সুপারিশ
সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে প্রস্তাব দেয়, ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন দ্রুততার সঙ্গে বিবেচনার জন্য একটি বিশেষ বিভাগ গঠন করা উচিত। এই বিভাগ স্বরাষ্ট্র বা কারা দফতরের অধীনে কাজ করবে এবং দেরি আটকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
বিচারপতিদের মন্তব্য
বিচারপতিরা বলেন, প্রাণভিক্ষার আবেদন জমা দেওয়ার পর দীর্ঘ সময় সিদ্ধান্তহীনতায় রাখা আসামির মানসিক যন্ত্রণা বাড়ায়। এটি তাঁর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। আদালত জানায়, আসামি সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করলে শুধুমাত্র দেরির কারণ পর্যালোচনা করা হবে, মামলার পুরনো বিষয়াদি নয়।
মানবাধিকার এবং সংবিধান
ফাঁসির সাজা কার্যকরে অযৌক্তিক দেরি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে অভিযুক্তের জীবন ও স্বাধীনতার অধিকারের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে। এই রায় মানবাধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় শুধু একটি মামলার জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা হয়ে থাকবে। অযৌক্তিক বিলম্ব রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া আসামিদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারে সহায়ক হবে।