প্রেমিক ভাড়া
কখনও পেশাগত জীবনের চাপ, কখনও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত—অনেকেই আজকাল বিয়ে বা দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের বাইরে থাকতে চান। কিন্তু এই সিদ্ধান্তটি সবসময় পরিবারের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। পরিবারের চাপ এবং সমাজের প্রত্যাশার মুখে দাঁড়িয়ে, অনেক তরুণী বেছে নিচ্ছেন এক অভিনব সমাধান—প্রেমিক ভাড়া করা। এমনই এক কাহিনি উঠে এসেছে ভিয়েতনামের মিন থুর জীবনে।
পরিবারের চাপ এবং মিনের সিদ্ধান্ত
উত্তর ভিয়েতনামের নাম ডিং প্রদেশের বাসিন্দা, ৩০ বছর বয়সী মিন থু পেশাগত জীবনে ব্যস্ত থাকায় বিগত পাঁচ বছর কোনও সম্পর্কে জড়াননি। কিন্তু তাঁর বাবা-মা এই বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত। বয়স বাড়ছে তাঁদের, এবং ভবিষ্যতে কে দেখাশোনা করবে এই ভাবনা তাঁদের অস্থির করে তোলে। অন্যদিকে, মিনেরও কাউকে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না। এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়, যখন নতুন বছরে বাড়ি ফেরার শর্ত হিসাবে বাবা-মা তাকে প্রেমিক নিয়ে আসার জন্য চাপ দেন।
মিনের বাবা-মা সাফ জানিয়ে দেন, ‘‘প্রেমিক ছাড়া বাড়ি ঢোকার কোনও উপায় নেই।’’ কিন্তু বিয়ে করার কোনও ইচ্ছা ছিল না মিনের। তাই দুই পক্ষের মধ্যস্থতা বজায় রাখতে, তিনি বেছে নেন এক অভিনব পথ—প্রেমিক ভাড়া করা।
ভাড়াটে প্রেমিকের গল্প
চলতি বছরের শুরুর দিকে মিন একজন প্রেমিক ভাড়া করেন। এর জন্য হাজার হাজার ডলার খরচ করতে হয় তাঁকে। ভিয়েতনামে প্রেমিক ভাড়া করার বিষয়টি নতুন নয়, তবে এর সাথে বেশ কিছু শর্ত জড়িত। প্রেমিকের সঙ্গে মানসিকভাবে জড়িত হওয়া যাবে না, এবং শারীরিক সম্পর্কের কোনও সুযোগ নেই। প্রেমিক শুধুমাত্র পরিবারের সামনে একটি বিশ্বাসযোগ্য ভূমিকা পালন করবেন।
মিন জানান, তাঁর ভাড়া করা প্রেমিকটি তাঁর থেকে পাঁচ বছরের বড় এবং পেশায় একজন নির্মাণশিল্পী। তিনি রান্নায় দক্ষ এবং ওয়াইন টেস্টিংয়ে প্রশিক্ষিত। এমনকি পরিবারের সঙ্গে দেখা করার আগে, মিন নিজের ব্যক্তিগত কিছু তথ্যও তাকে জানিয়ে দেন, যাতে চরিত্রটি আরও বাস্তবসম্মত মনে হয়। তাঁর বাবা-মা এই “প্রেমিককে” দেখে এতটাই সন্তুষ্ট হন যে, বিয়ের জন্য মেয়েকে চাপ দেওয়া বন্ধ করে দেন।
আরও গল্প: ভিন্ন তরুণীদের অভিজ্ঞতা
মিন থু একমাত্র নন, যিনি এই পথ বেছে নিয়েছেন। ৩৩ বছর বয়সী খান গক, যিনি কখনও কোনও সম্পর্কে ছিলেন না, তিনিও একই কারণে প্রেমিক ভাড়া করেন। অন্যদিকে, ২৫ বছরের হুই তুয়ান নামক এক যুবক গত এক বছর ধরে পেশাদার “প্রেমিক” হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর কাজের পরিধি বিস্তৃত—কফি ডেট, কেনাকাটা, এমনকি পরিবারের সামনে প্রেমিক সেজে অভিনয়।
তুয়ান জানান, নকল প্রেমিক সাজার জন্য তাকে রান্না শেখা, ভাল ছবি তোলা, এমনকি গান গাওয়ার দক্ষতাও অর্জন করতে হয়েছে। প্রতিটি কাজের জন্য তিনি নির্ধারিত পারিশ্রমিক নেন। সাধারণ কফি ডেটের জন্য তিনি ৮০০-১৭০০ টাকা নেন, আর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাঁর পারিশ্রমিক হয় প্রায় ৩,০০০ টাকা।
সতর্কতার বার্তা
তবে এই পেশার ঝুঁকিও কম নয়। ভিয়েতনামের অ্যাকাডেমি অফ জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশনের গবেষক গুয়েন থান গা জানান, এই ধরনের পরিস্থিতিতে তরুণীরা বিপদে পড়লে আইনি সহায়তা পাওয়া কঠিন। তাই এই বিষয়ে সকলকে সাবধান থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শেষ কথা
সমাজের চাপে সম্পর্কের এই নতুন রূপ প্রশ্ন তুলছে আধুনিক জীবনের চাহিদা এবং ব্যক্তিগত পছন্দের মধ্যে ভারসাম্যের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। যদিও এই পথ আপাতত কিছু মানুষকে স্বস্তি দিচ্ছে, তবে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। সম্পর্কের জন্য কি সত্যিই মনের যোগাযোগ অপরিহার্য, নাকি সামাজিক প্রত্যাশাই শেষ কথা? এই প্রশ্নের উত্তরই হয়তো আগামী দিনের সমাজকে নতুন দিশা দেখাবে।

