Monday, December 1, 2025

প্রাথমিক শিক্ষায় সেমেস্টার পদ্ধতি: প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বড়সড় বদল

Share

প্রাথমিক শিক্ষায় সেমেস্টার পদ্ধতি

আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিক শিক্ষায় পরীক্ষার পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তন আসছে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য চালু করা হচ্ছে সেমেস্টার পদ্ধতি। শুক্রবার এক সাংবাদিক বৈঠকে এই নতুন ব্যবস্থা ঘোষণা করেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল। নতুন এই ব্যবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্রেডিট বেসড সেমেস্টার সিস্টেম’। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই পদ্ধতিতে ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন শুরু হবে।

নতুন পদ্ধতির প্রধান বৈশিষ্ট্য

এবার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বছরে একবার নয়, দু’বার পরীক্ষা নেওয়া হবে। গোটা শিক্ষাবর্ষকে দুটি সেমেস্টারে ভাগ করা হয়েছে:

  • প্রথম সেমেস্টার: জানুয়ারি থেকে জুন
  • দ্বিতীয় সেমেস্টার: জুলাই থেকে ডিসেম্বর

প্রথম সেমেস্টারের জন্য পরীক্ষার মোট নম্বর ৪০। এই ৪০ নম্বরের মধ্যে ২০ নম্বর থাকবে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে উপস্থিতি ও আচরণের মূল্যায়নের উপর, এবং বাকি ২০ নম্বর দেওয়া হবে বিভিন্ন প্রজেক্টের ভিত্তিতে। দ্বিতীয় সেমেস্টারের পরীক্ষাটি পুরোপুরি লিখিত হবে এবং এটি ৬০ নম্বরের হবে।

একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা সারা রাজ্যে

এবার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র তৈরি করার দায়িত্ব আর স্কুলগুলোর হাতে থাকছে না। পুরো রাজ্যের জন্য একক প্রশ্নপত্র তৈরি করবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। তবে খাতা দেখার দায়িত্ব থাকবে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর।

পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল জানান, ‘‘এই পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের শেখার পদ্ধতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মৌলিক শিক্ষায় আরও গভীরতা আসবে এবং জাতীয় স্তরের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় ঘটবে।’’

পাঠ্যক্রমেও আসছে পরিবর্তন

২০২৫ শিক্ষাবর্ষে এখনও পুরনো পাঠ্যক্রম অনুসারেই পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যক্রমেও বড় পরিবর্তন আনা হবে। ইতিমধ্যেই এই পরিকল্পনার জন্য শিক্ষা দপ্তরের অনুমোদন পাওয়া গেছে।

ক্রেডিট স্কোর প্রবর্তন

পড়ুয়াদের মূল্যায়নে নতুন ব্যবস্থা হিসেবে চালু হচ্ছে ‘ক্রেডিট স্কোর’।

  • প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য বছরে ৩৭৬ ঘণ্টা ক্লাসের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ ক্রেডিট স্কোর হবে ১৩.৫।
  • তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ক্লাসের সময় বছরে ৪৬০ ঘণ্টা। এই তিন শ্রেণির জন্য সর্বোচ্চ ক্রেডিট স্কোর হবে ১৬.৫।

শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ

নতুন পরীক্ষার পদ্ধতি চালু করার পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দ্রুত প্রশিক্ষণের কাজ শুরু হবে। পর্ষদের ডেপুটি সেক্রেটারি পার্থ কর্মকার বলেন, ‘‘আমরা চাই শিক্ষকদের নতুন পদ্ধতিতে দক্ষ করে তুলতে, যাতে শিক্ষার্থীদের আরও কার্যকরভাবে শেখানোর কাজ করা যায়।’’

ছোট বয়স থেকে জাতীয় মানের শিক্ষার প্রস্তুতি

পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল আরও বলেন, ‘‘সরকারের সহায়তায় আমরা এই সাহসী পদক্ষেপ নিতে পেরেছি। ছোট বয়স থেকেই এই ধরনের মূল্যায়ন পদ্ধতি ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের জন্য আরও উপযোগী করে তুলবে।’’

উদ্দেশ্য এবং প্রত্যাশা

নতুন এই সেমেস্টার পদ্ধতি এবং পাঠ্যক্রমের পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও শক্তিশালী করা। জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা ছাত্রছাত্রীদের বুনিয়াদকে মজবুত করবে।

এই পরিবর্তনের ফলে শুধু শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিই নয়, বরং শিক্ষার মানেও উন্নতি হবে বলে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা। নতুন ব্যবস্থার সফল বাস্তবায়ন প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

Read more

Local News