প্রাণভিক্ষা পাবেন নিমিশা?
২০১৭ সালে ইয়েমেনের একজন নাগরিক তালাল আব্দো মাহদির হত্যা করার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার মুক্তির জন্য শেষ পর্যন্ত ‘ব্লাড মানি’ বা ক্ষতিপূরণ দেয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করবে এবং নিমিশার মুক্তির কোনো সম্ভাবনা থাকলে তা কীভাবে বাস্তবে পরিণত হবে, সেটাই এখনো অনিশ্চিত।
নিমিশা, কেরলের পালাক্কড় জেলার এক তরুণী, ২০০৮ সাল থেকে ইয়েমেনে কাজ করছিলেন। তিনি একাধিক বছর সেখানে ছিলেন এবং ২০১৪ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরও দেশটি ছাড়েননি। ২০১৫ সালে ইয়েমেনি নাগরিক মাহদির সঙ্গে যৌথভাবে একটি ক্লিনিক খুললেও, সেখানে সমস্যা তৈরি হয়। অভিযোগ, মাহদি তাকে অর্থকষ্টে ফেলেছিল এবং নানা ধরনের অত্যাচার করেছিল। এক পর্যায়ে মাহদি তাঁর পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে নিমিশাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করতে থাকে। ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই এক রাতের ঘুমের ইঞ্জেকশনে মাহদির মৃত্যু হয়, এবং এরপর তার দেহ টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এই ঘটনায় নিমিশা হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হন এবং ইয়েমেনের আদালত ২০১৮ সালে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়।
এখন, নিমিশার পরিবার তার মুক্তির জন্য ভারত সরকারের সাহায্য চেয়ে আসছে। ভারত সরকারও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে, তবে ইয়েমেনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং দুই দেশের সম্পর্কের জটিলতা যে মুক্তির পথকে আরো কঠিন করে তুলছে, তা স্পষ্ট। ভারত-ইয়েমেন সম্পর্ক বেশ কিছু রাজনৈতিক ইস্যুর কারণে বিপদমুক্ত নয়, যেমন ইয়েমেন সরকার এবং ইরানের মদতপুষ্ট বিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে চলা যুদ্ধে উত্তেজনা, যার কারণে পারস্পরিক সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়েছে।
নিমিশার মুক্তির সম্ভাবনা একেবারেই শেষ হয়ে যায়নি, কিন্তু একমাত্র যে বিষয়টি এখন কাজ করতে পারে তা হল ‘ব্লাড মানি’। ইয়েমেনের আইন অনুযায়ী, এই ধরনের হত্যাকাণ্ডে নিহত ব্যক্তির পরিবারের কাছে অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে একটি মধ্যস্থতার সুযোগ সৃষ্টি করা যায়। নিমিশার পরিবারের পক্ষ থেকে এক আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে, যিনি এই ধরনের অর্থের মাধ্যমে মুক্তির পথ সন্ধান করবেন। কিন্তু এই প্রক্রিয়া সহজ নয়। জানা গেছে, প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং আরও দেড় কোটি টাকা ‘ব্লাড মানি’ হিসেবে প্রদান করতে হবে। তবে, নিহত মাহদির পরিবার তার মৃত্যুর প্রতিশোধ চেয়েছে এবং তারা ক্ষতিপূরণ না, শাস্তি চাইছে।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকেও কিছু সাহায্য মিলেছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে, নিমিশার মা ভারত সরকারের বিশেষ অনুমতিতে ইয়েমেনে গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি একাধিক বার সরকারের কাছে তার মেয়ের প্রাণভিক্ষার আবেদন জানান। যদিও ভারত সরকারের বিবৃতি অনুযায়ী, তারা পরিস্থিতির জন্য সচেতন এবং সকল ধরণের সাহায্য করতে প্রস্তুত, তবে ইয়েমেনের পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে, কোনো কূটনৈতিক চাপ কার্যকর হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
এছাড়া, ‘সেভ নিমিশা প্রিয়া’ নামে একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, যা ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় সেই প্রচেষ্টা বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে, নিমিশার মুক্তির একমাত্র আশার আলো হল ‘ব্লাড মানি’, তবে তার মুক্তির জন্য এটি কতটুকু কার্যকর হবে, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। আইন অনুযায়ী, যদি মাহদির পরিবার অর্থ গ্রহণ করে, এবং তারপর প্রাণভিক্ষা প্রদান করে, তবেই নিমিশার মৃত্যুদণ্ড মকুব হতে পারে। তবে, এখন পর্যন্ত এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি যে, মাহদির পরিবার তার হত্যার জন্য মাপ করবে।
নিমিশার জন্য সময় ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে, এবং তার মুক্তির জন্য ক্ষীণ আশা থাকলেও তা বাস্তবে রূপ নিতে সময় লাগতে পারে।
প্রাতরাশে মুচমুচে স্বাদ! ডিম ও ভাতের মিশ্রণে তৈরি করুন খাস্তা ওমলেট