প্রশ্ন- পায়েল সরকারের প্রতিবাদের কাহিনি
কলকাতার হৃদয়ে এখনও রয়ে গেছে আরজি কর-কাণ্ডের তীব্র স্মৃতি। গত বছরের সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার ক্ষত মুছে যায়নি শহরবাসীর মন থেকে। আদালত সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করলেও অনেকের মনে থেকে গেছে অসংখ্য প্রশ্ন।
সেই প্রশ্নগুলোকেই নতুন আলোয় তুলে ধরতে চলেছেন পরিচালক মিলন ভৌমিক। তাঁর নতুন ছবি ‘প্রশ্ন’ মুক্তি পাবে আগামী ২৫ এপ্রিল। এই ছবিতে নির্যাতিতার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পায়েল সরকার। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন রাজেশ শর্মা, তুলিকা বসু, খরাজ মুখোপাধ্যায়-সহ আরও অনেকে।
🎭 নির্যাতিতার চরিত্রে পায়েল: মানসিক যুদ্ধের অভিজ্ঞতা
নির্যাতিতার ভূমিকায় অভিনয় করা সহজ নয়। এমন চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করতে হয়েছে পায়েলকে। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন,
“এই ধরনের স্পর্শকাতর ঘটনা আমাদের সকলকে ছুঁয়ে যায়। তাই অভিনয় করতে গিয়ে আমিও সেই যন্ত্রণাগুলোকে অনুভব করেছি। কখন যে সেই চরিত্রটা আমার মধ্যে গেঁথে গিয়েছে, বুঝতেই পারিনি।”
অভিনয়ের খাতিরে নিজেকে মানসিকভাবে সেই পরিস্থিতিতে বসাতে হয়েছে তাঁকে।
তিনি স্বীকার করেন,
“রাগ, দুঃখ, হতাশা — সবই এসেছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি এই ভেবে, সমাজ এতটা নিচে নামতে পারে!”
🧑⚖️ সত্যের খোঁজে ‘প্রশ্ন’
এই ছবিতে কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি নয়, বরং সমাজের সামগ্রিক অবক্ষয়কেই তুলে ধরা হয়েছে।
পায়েল বলেন,
“নারী নির্যাতন আমাদের সমাজের শিরা-উপশিরায় মিশে আছে। আজও অনেক ঘরেই এই ব্যাধির অস্তিত্ব দেখা যায়। আমরা অন্যায় ঢাকতে শাসনব্যবস্থাকে দায়ী করি, অথচ সমাজের বিবেকের প্রশ্ন তোলা হয় না। এই ছবিতে সেই প্রশ্নই তোলা হয়েছে।”
🎬 মিলনের প্রত্যাবর্তন: সাহসী গল্প বলার দায়বদ্ধতা
অনেক বছর পর বড়পর্দায় ফিরলেন পরিচালক মিলন ভৌমিক। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি ‘প্রশ্ন’-এর গল্প বেছে নিয়েছেন।
তাঁর মতে,
“সমাজের অন্যায়-অবিচারকে তুলে ধরা একজন পরিচালকের দায়িত্ব। এই ছবিতে সেই চেষ্টাই করেছি। তবে কোথাও কোনও ব্যক্তিকে ছোট করে দেখানো হয়নি।”
৩৭ দিন ধরে কলকাতা, ঝাড়খণ্ড ও অসমের বিভিন্ন জায়গায় শুটিং হয়েছে।
🎟️ সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র: শালীনতার সীমা অতিক্রম না করেই প্রতিবাদ
‘প্রশ্ন’ ছবিটি পেয়েছে U/A 16 শংসাপত্র। পরিচালক স্পষ্ট করেছেন, ছবিতে কোনও গ্রাফিক্যাল ধর্ষণ বা হিংসার দৃশ্য দেখানো হয়নি। সবকিছুই প্রতীকীভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
তিনি বলেন,
“এই ছবি সমাজকে আয়নার সামনে দাঁড় করাবে। কিন্তু তা করতে গিয়ে কোথাও শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করা হয়নি।”
🎟️ দর্শক কি ফিরবেন প্রেক্ষাগৃহে?
বেশ কিছুদিন ধরেই অভিযোগ, বাংলা ছবির দর্শক প্রেক্ষাগৃহমুখী নন। তবে পায়েল এবং মিলন, দু’জনেই আশাবাদী।
পায়েল বলেন,
“এই ছবির বিষয়বস্তু মানুষকে ভাবাবে। যখন কেউ নিজের চারপাশের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলতে শিখবে, তখনই ছবির সার্থকতা প্রমাণ হবে।”
২৫ এপ্রিল, প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে ‘প্রশ্ন’। শহরের দেয়ালে দেয়ালে ঝুলবে পোস্টার, আর হয়তো দর্শকদের মনে জন্ম নেবে নতুন কিছু প্রশ্ন। তবে তার উত্তর পেতে গেলে দেখতে হবে ‘প্রশ্ন’।