Sunday, February 23, 2025

পুলিশের ঢিলেঢালা মনোভাবের মধ্যে ছট উৎসবে শব্দবাজির তাণ্ডব

Share

ছট উৎসবে শব্দবাজির তাণ্ডব

কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ছট উৎসবের দিনে পুলিশের ঢিলেঢালা ব্যবস্থা এবং শব্দবাজির দৌরাত্ম্য ব্যাপকভাবে দেখা গেছে। বিশেষত, নোনাডাঙার বেসরকারি হাসপাতাল সংলগ্ন ঝিলপাড়ের আশেপাশে কিশোরদের একটি দল শব্দবাজি ফাটিয়ে উৎসবের পরিবেশকে আরও তীব্র করে তোলে। তাসের বিকট আওয়াজের মধ্যে এই কিশোররা পকেট থেকে চকলেট বোমা বের করে ফাটাচ্ছিল এবং কেঁপে ওঠে চারপাশের পরিবেশ। অথচ, পুলিশের উপস্থিতির পরেও এই ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

একটি কিশোর জানায়, “এটা ব্ল্যাক-ক্যাট, চকলেটের বাবা!” এবং কথাটি শেষ হওয়ার আগেই এক কিশোর বাজির সলতেতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তীব্র আওয়াজে চারপাশ কেঁপে উঠলেও, মাত্র ২০-২৫ মিটার দূরে কর্তব্যরত পুলিশ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নড়াচড়া করতে দেখা যায়নি। পুলিশের এই ঢিলেঢালা মনোভাব এবং নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে শহরের সচেতন নাগরিকদের মধ্যে, যারা অভিযোগ করছেন যে, পুলিশের এমন অবস্থা শহরের অন্যান্য জায়গাতেও ঘটছে।

এদিকে, সুভাষ সরোবর এবং রবীন্দ্র সরোবরের ক্ষেত্রে পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। এই দুই সরোবরের প্রবেশপথ বন্ধ করে, দুপুর থেকে সেখানে পুলিশ পাহারা দাঁড়িয়ে ছিল। ছটের উৎসব উপলক্ষে সরোবরের আশপাশে গাড়ি চলতে দেওয়া হয়নি, এবং কিছু কিশোর রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ তাদের ধমক দিয়ে ফিরিয়ে দেয়। এমনকি পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরাও পুলিশের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সরোবরের নিরাপত্তায় ছিলেন। তবে, প্রশ্ন উঠেছে যে, শহরের অন্য অঞ্চলে কেন এই ধরনের তৎপরতা দেখা যায়নি। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছট উৎসবে শব্দবাজির তাণ্ডব এবং নিয়ম ভঙ্গের ঘটনা ঘটলেও, পুলিশ কেন কঠোর ব্যবস্থা নিল না, তা নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছেন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা।

রবীন্দ্র সরোবরের ক্ষেত্রে, পুলিশ এবং পরিবেশ কর্মীদের তৎপরতা চোখে পড়লেও, শহরের অন্যান্য জায়গায় যেমন রাসবিহারী কানেক্টরে, সুভাষ সরোবর সংলগ্ন কাদাপাড়া রোডে, ধর্মতলা, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ চত্বরে, শব্দবাজির দৌরাত্ম্য এবং নিয়ম ভঙ্গের ছবি স্পষ্ট ছিল। বিশেষ করে রাসবিহারী কানেক্টরে একটি শোভাযাত্রায়, গাড়িতে বিশাল বিশাল বক্স সাজিয়ে বাজি ফাটানোর পাশাপাশি তাসের দলও উপস্থিত ছিল। শোভাযাত্রার মধ্যে নাচতে থাকা ছেলেমেয়েরা একদিকে আনন্দে মেতে ওঠে, অন্যদিকে সেই আনন্দের মধ্যে বাজি ফাটানোর তাণ্ডব চলতে থাকে। পুলিশ কিছুটা সক্রিয় হলেও, শব্দবাজির ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এদিকে, লালবাজার পুলিশের দাবি, তারা গোটা শহরে পুলিশ বাহিনীকে সক্রিয় রেখেছে এবং ছট উৎসবের সময় নিয়ম ভঙ্গের ঘটনা আটকানোর জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এক পুলিশ কর্তা জানান, “বাজির দৌরাত্ম্য আটকাতে এবং ছট উৎসবের সময় নিয়ম ভঙ্গ করতে আমরা লাগাতার ব্যবস্থা নিচ্ছি। ছটেও এই নিয়ম ভঙ্গের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

তবে, শহরের বিভিন্ন অংশে পুলিশের ঢিলেঢালা মনোভাব এবং শব্দবাজির তাণ্ডবের একাধিক উদাহরণ, এমনকি শোভাযাত্রার মধ্যে বাজির ব্যবহারের ঘটনা, পুলিশের দাবি প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। উৎসবের নামে কতটা বেলাগাম হতে পারে শব্দবাজির দৌরাত্ম্য—এই প্রশ্ন এখন কলকাতার মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

এই ঘটনা শহরের জন্য একটি সতর্ক সংকেত, যেখানে পুলিশকে সক্রিয় হতে হবে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট এলাকায় নয়, বরং সমস্ত জায়গায় যাতে উৎসবের নামে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং নিয়ম ভঙ্গকারীরা কোনোভাবেই রেহাই না পায়।

Read more

Local News