পুর গর্জনই সার
গত বছরের ১৭ মার্চ গভীর রাতে গার্ডেনরিচের আজহার মোল্লা লেনে নির্মীয়মাণ বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ে প্রাণ হারান ১৩ জন। ওই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিম এখন জেলবন্দি। তদন্তে উঠে আসে, ভেঙে পড়া বহুতলটির পাশেই আরও বেশ কয়েকটি বেআইনি বাড়ি নির্মাণে জড়িত ছিলেন ওয়াসিম। সেসব বাড়ির একটি ছিল হরিবাবু পল্লি লেনে। মার্চ মাসেই পুরসভা সেই বাড়ি ভাঙার নোটিস দেয়। তবে ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও বাড়িটি এখনও বহাল তবিয়তে দাঁড়িয়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, “বাড়িটি ধীরে ধীরে পাশের বাড়ির গায়ে হেলে পড়ছে। পুরসভা কবে বাড়িটি ভাঙবে, তা কেবল তারাই জানে।”
বিপজ্জনক পরিস্থিতি
গার্ডেনরিচের পাহাড়পুর রোডে গিয়ে দেখা যায়, দুটি বহুতল একে অপরের গায়ে হেলে পড়েছে। পুরসভার তরফে বাড়িগুলি ফাঁকা করার নোটিস জারি করা হলেও, এখনও পর্যন্ত সেগুলি ভাঙা হয়নি। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, “এখানে টাকার জোরেই সব ঠিক হয়ে যায়। কেউ বেআইনি বাড়ি ভাঙতে পারবে না।”
বরো চেয়ারম্যান ও মেয়রের বক্তব্য
স্থানীয় ১৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীল জানান, “গার্ডেনরিচে বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে পুরকর্মীরা হামলার শিকার হচ্ছেন। প্রোমোটার ও তাঁদের লোকজন বাধা দিচ্ছেন। তাঁদের সুরক্ষা দেবে কে?” তবে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের মতে, “বেআইনি নির্মাণ ভাঙার দায়িত্ব পুরসভার আধিকারিকদের। বরো চেয়ারম্যানের নয়। উনি অকারণে বেশি কথা বলেন।”
পরিসংখ্যান যা বলছে
গত বছরের ২৮ জুন থেকে ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে গার্ডেনরিচ ও মেটিয়াবুরুজ এলাকায় ১২৭টি বেআইনি নির্মাণের তথ্য নথিভুক্ত করেছে পুরসভা। এর মধ্যে মাত্র ২৭টি বাড়ি ভাঙা হয়েছে। স্থানীয়দের মতে, “পুরসভার প্রতিনিধিরাই বেআইনি বাড়ি ভাঙতে বাধা দেন।”
নিয়মের তোয়াক্কা নেই
আজহার মোল্লা লেনের বহুতল ভেঙে পড়ার পরে পুরসভা বেশ কিছু নিয়ম কার্যকর করার কথা বললেও বাস্তব পরিস্থিতি বলছে ভিন্ন কথা। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, “এখানে কোনও নিয়ম মানা হয় না। রাস্তার জায়গা অনুযায়ী যে আকারের বাড়ি হওয়ার কথা, তার তুলনায় তিনগুণ বড় বাড়ি তৈরি হয়। পাঁচতলা বাড়ির অনুমোদন না থাকলেও সেই বাড়ি তৈরি হয়ে যায়। ফলস্বরূপ বাড়ি ভেঙে পড়ছে কিংবা হেলে যাচ্ছে।”
আদালতে মামলা ও দোষারোপ
বরো চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীল দাবি করেন, “বাড়িওয়ালারা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায় বেআইনি নির্মাণ ভাঙা যাচ্ছে না। তবে পুরসভা হাত গুটিয়ে বসে নেই। কিছু অবৈধ বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে।”
বাস্তবের সঙ্গে খাতাকলমের ফারাক
আজহার মোল্লা লেনে ভেঙে পড়া বাড়ির ধ্বংসাবশেষ এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার করা হয়নি। আশপাশের বহুতলগুলি এতটাই ঘনিষ্ঠভাবে তৈরি হয়েছে যে, সেগুলি ভয়াবহ দুর্ঘটনার জন্য অপেক্ষা করছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন, “পুরসভা যদি নিয়ম কার্যকর না করে, তবে এই এলাকা আদৌ সুরক্ষিত হবে কীভাবে?”
সমস্যার মূলে অনিয়ম
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, “বেআইনি বাড়ি ভাঙার নামে পুরসভার গর্জনই সার। কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেই। মেয়র যতই বলুন বেআইনি নির্মাণ বন্ধ হয়েছে, বাস্তব পরিস্থিতি কিন্তু উল্টো।”
যুদ্ধবিমানের অনুপাত ১২ বনাম ১: ড্রাগনের হাওয়াই শক্তি বৃদ্ধিতে আতঙ্কে আমেরিকা