Monday, December 1, 2025

পুতিনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র বনাম আমেরিকার আকাশ প্রতিরক্ষা: প্রযুক্তির দ্বন্দ্বে খোলা চ্যালেঞ্জ

Share

পুতিনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র

ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝেই উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষমতা প্রদর্শনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক অভিনব চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। রুশ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ওরেশনিক’ এবং আমেরিকা-সহ নেটোভুক্ত দেশগুলির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘থাড’-এর মধ্যে প্রযুক্তিগত দ্বন্দ্বে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মস্কোতে এক সাংবাদিক বৈঠকে পুতিন তাঁর এ ঘোষণার মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন নতুন বিতর্কের ক্ষেত্র।

পুতিনের চ্যালেঞ্জ

গত ১৯ ডিসেম্বর মস্কোতে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক বৈঠকে পুতিন আমেরিকা ও পশ্চিমি দেশগুলিকে আহ্বান জানান, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভকে একটি পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করে তাঁদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের কার্যক্ষমতা প্রমাণ করতে। তিনি সরাসরি দাবি করেন, রাশিয়ার ‘ওরেশনিক’ ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংস ক্ষমতার সামনে থাড এবং পশ্চিমি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অসহায় প্রমাণিত হবে।

‘ওরেশনিক’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র

‘ওরেশনিক’ একটি মাঝারি পাল্লার হাইপারসনিক ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা শব্দের গতির চেয়ে ১০ গুণ দ্রুত (১০ ম্যাক) চলতে সক্ষম। ইউক্রেন যুদ্ধে এই ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার ইতিমধ্যেই ঘটেছে। গত ২১ নভেম্বর ডেনিপ্রোতে রাশিয়ার ‘অপারেশন ডেনিপ্রো’র সময় এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োগ করা হয়। ইউক্রেনীয় সূত্রে জানা যায়, মাত্র ১৫ মিনিটে এটি প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানে।

আমেরিকার পাল্টা দাবি

রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ‘ওরেশনিক’-এর কার্যক্ষমতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছে আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্তারা দাবি করেন, তাঁদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সহজেই মাঝ আকাশে এই ক্ষেপণাস্ত্রকে চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে সক্ষম। তবে পুতিনের মতে, থাড বা অন্য কোনও পশ্চিমি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রুশ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রকে থামাতে পারবে না।

প্রযুক্তি প্রতিযোগিতার আভাস

পুতিনের ভাষায়, ‘‘আমরা যদি ওরেশনিকের পরীক্ষা করি এবং তারা তাদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম প্রস্তুত রাখে, তবুও আমাদের মিসাইল নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবে। তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হওয়ার আগেই ওরেশনিক কাজ শেষ করবে।’’ এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি আমেরিকার সামরিক সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।

আঞ্চলিক উত্তেজনা

এই চ্যালেঞ্জ ঘিরে পূর্ব ইউরোপে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ইউক্রেনের ‘রুটির ঝুড়ি’ নামে পরিচিত কিয়েভ এবং এর আশেপাশের এলাকায় যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে। পুতিনের এই পদক্ষেপ বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপজুড়ে যুদ্ধের ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত করতে পারে।

দেশীয় প্রযুক্তির সাফল্য

পুতিন দাবি করেন, ‘ওরেশনিক’ সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। এটি আগের সমস্ত ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় অনেক উন্নত। মস্কো বলছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে রাশিয়া কৌশলগত ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

থাড বনাম এস-৪০০

আমেরিকা ইতিমধ্যেই ইউক্রেনকে ‘থাড’ সরবরাহের ঘোষণা করেছে। পুতিন এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন এবং দাবি করেছেন, রাশিয়ার ‘এস-৪০০’ ও ‘এস-৫০০’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার তুলনায় থাড অনেক পিছিয়ে। রুশ প্রেসিডেন্টের মতে, আমেরিকার ‘প্যাট্রিয়ট’ সিস্টেম পুরনো হয়ে গিয়েছে এবং এটি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে অক্ষম।

উপসংহার

পুতিনের এই প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ শুধু রাশিয়া এবং আমেরিকার মধ্যে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রকেই উন্মোচন করেনি, বরং এটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা এবং কৌশলগত ভারসাম্যের প্রশ্নও তুলেছে। এই চ্যালেঞ্জের ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে এটা নিশ্চিত যে, এই পরিস্থিতি ইউরোপের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রেক্ষাপটে বড় প্রভাব ফেলবে।

Read more

Local News