Monday, December 1, 2025

পাসপোর্ট বিতরণ নিয়ে চাঞ্চল্য: খাম ছিঁড়ে যেতেই সন্দেহ, পুলিশের দ্বারস্থ পোস্টমাস্টার!

Share

পাসপোর্ট বিতরণ নিয়ে চাঞ্চল্য

নদিয়ার তেহট্টের একটি পোস্ট অফিসে একসঙ্গে ৫০টি পাসপোর্ট বিতরণের ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে জোরদার তদন্ত। ঘটনাটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট পোস্টমাস্টারের সন্দেহ দানা বাঁধতেই তিনি সোজা থানার দ্বারস্থ হয়েছেন। পুলিশ এখন এই ঘটনার গভীরে গিয়ে জালিয়াতির একটি বড় চক্রের সন্ধান পেতে মরিয়া।

ঘটনার সূত্রপাত

কয়েকদিন আগে টিটাগর পোস্ট অফিসে নদিয়ার তেহট্ট থানা এলাকার বিভিন্ন ঠিকানায় বিলির জন্য প্রায় ৫০টি খামবন্দি পাসপোর্ট আসে। পাসপোর্ট বিলি করার প্রস্তুতির সময় একটি খামের স্ট্যাম্প লাগাতে গিয়েই তা ছিঁড়ে যায়। ভেতরে থাকা পাসপোর্ট দেখে পোস্ট অফিসের কর্মীরা অবাক হয়ে যান। সন্দেহজনক মনে হতেই পোস্টমাস্টার খড়দা থানায় অভিযোগ জানান। এরপর থেকেই পুলিশ ঘটনাটি নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে।

জাল পাসপোর্টের আশঙ্কা

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, এই পাসপোর্টগুলি হয়তো জাল নথির ভিত্তিতে তৈরি। এতে সংশ্লিষ্ট চক্রের হাত রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের এই জাল পাসপোর্ট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশি শরণার্থীদের ঢল ও জঙ্গি প্রবেশের শঙ্কা

সম্প্রতি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচারের জেরে শরণার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে শরণার্থীদের সঙ্গে জঙ্গিরা মিশে ভারতে প্রবেশ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাল পাসপোর্ট তৈরি করে এই জঙ্গিরা ভারতীয় নাগরিকত্বের সুবিধা নিতে চাইছে। এই চক্রের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শিথিল হয়ে পড়তে পারে।

পোস্ট অফিসের কর্মীদের ভূমিকা

তদন্তে উঠে আসছে, এই জালিয়াতি চক্রে পোস্ট অফিসের কিছু স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীর ভূমিকা থাকতে পারে। তাঁরা হয়তো বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। জানা গেছে, ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সহজেই ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে।

পুলিশের ভূমিকা ও প্রশাসনিক প্রশ্ন

পাসপোর্ট তৈরির সময় পুলিশ ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক। তবে, এত জাল নথি কীভাবে সেই ভেরিফিকেশন পদ্ধতিতে ধরা পড়ল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও শুরু হয়েছে আলোচনা। কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার উভয়েই এই পরিস্থিতিতে দায়বদ্ধ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গ্রেফতার ও চক্রের পর্দাফাঁস

সম্প্রতি চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, যা এই জালিয়াতি চক্রের পর্দাফাঁসে সাহায্য করেছে। ধৃতদের থেকে জানা গেছে, জাল নথি তৈরি থেকে শুরু করে তা বৈধ পাসপোর্টে রূপান্তর করার একটি সুসংগঠিত পদ্ধতি রয়েছে।

কীভাবে সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হবে?

এই ধরনের জালিয়াতি শুধু প্রশাসনের জন্য নয়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্যও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। বিদেশে ভ্রমণ বা পড়াশোনার জন্য বৈধ পাসপোর্ট প্রয়োজন। অথচ, জাল নথির কারণে প্রকৃত আবেদনকারীদের প্রক্রিয়া জটিল হয়ে উঠতে পারে।

উপসংহার

নদিয়ার এই ঘটনা এক দিক থেকে পোস্টমাস্টারের সতর্কতাকে প্রশংসিত করেছে, আবার অন্যদিকে প্রশাসনিক দুর্বলতাকেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। পুলিশের তৎপরতায় যদি এই চক্র সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয়, তাহলে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একটি বড় সাফল্য আসবে। তবে, এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতন হওয়া জরুরি, যাতে তারা কোনওভাবে এই চক্রের ফাঁদে পা না দেন।

দেশের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু প্রশাসনের জন্য এই ধরনের অপরাধ নির্মূল করা এখন সময়ের দাবি। এই ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ আশা করছে সাধারণ মানুষ।

Read more

Local News