আখড়া ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন ‘আইআইটি বাবা’!
মহাকুম্ভে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন ‘আইআইটি বাবা’ অভয় সিংহ। তাঁর অনুরাগী এবং সংবাদমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা এই রহস্যময় সাধুকে নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। কেউ বলেছিল, বিখ্যাত হওয়ার চাপ সামলাতে না পেরে তিনি অজ্ঞাতবাসে গিয়েছেন। আবার কেউ বলেছিল, তিনি নিজেই আখড়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন। কিন্তু শনিবার অভয় নিজে হাজির হয়ে এক চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন— তিনি কোথাও পালাননি। বরং তাঁকে রাতারাতি আখড়া ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।
রাতারাতি আখড়া ছাড়তে বাধ্য করা হয়
অভয় সিংহ দাবি করেন, মাদি আশ্রমের পরিচালকেরা তাঁকে রাতের অন্ধকারে আখড়া ছাড়তে বলেন। এর পেছনে কারণ ছিল তাঁর খ্যাতি এবং আশ্রমের গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার ভয়। অভয় জানান, ‘‘ওরা জানে আমি এখন বিখ্যাত। আমি ওদের বিষয়ে এমন কিছু গোপন তথ্য ফাঁস করে দিতে পারি যা ওদের অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। তাই ওরা আমায় আখড়া ছাড়তে বলে এবং ভুয়ো খবর ছড়ায় যে আমি নিজের ইচ্ছেতেই চলে গিয়েছি।’’
জুনা আখড়ার মাদি আশ্রমে দীর্ঘদিন ধরে থাকা অভয় সিংহ জানান, অন্য সাধুরা ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর নামে অপপ্রচার চালিয়েছে। তাঁর সম্পর্কে বলা হয়, তিনি প্রচারের আলো এড়াতে এবং একান্তে থাকতে আখড়া ছেড়েছেন। কিন্তু অভয়ের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘‘ওরা মিথ্যে বলছে। আমাকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
অভয়ের মানসিক স্বাস্থ্য এবং মাদক সংক্রান্ত অভিযোগ
জুনা আখড়ার কিছু সাধু সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ করেন যে, অভয়ের মানসিক স্বাস্থ্য সঠিক নয়। তাঁরা বলেন, তিনি নিয়মিত মাদক সেবন করেন এবং মিডিয়ার সামনে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। তবে অভয় এসব অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
অভয় কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘যাঁরা আমার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা কি কোনও মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ? ওদের মন্তব্যের কোনও ভিত্তি নেই। আমার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলার অধিকার তাঁদের নেই।’’
গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন
অভয়ের সঙ্গে তাঁর একসময়ের গুরু সোমেশ্বর পুরীর সম্পর্ক নিয়েও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সোমেশ্বর নিজেকে অভয়ের গুরু বলে দাবি করলেও অভয় তা নস্যাৎ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘উনি আমার গুরু নন। আমাদের মধ্যে কোনও গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক নেই। আমার খ্যাতি কাজে লাগিয়ে উনি নিজের পরিচিতি বাড়াতে চাইছেন।’’
অভয়ের জীবনযাত্রার পটভূমি
হরিয়ানার ঝজ্জর জেলার জাঠ পরিবারে জন্ম অভয় সিংহের। তিনি বম্বে আইআইটি থেকে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন বলে দাবি করেন। তারপর কানাডার একটি বিমান নির্মাণকারী সংস্থায় কিছুদিন কাজ করেন। কিন্তু কোভিড অতিমারির সময় প্রবাসে একা থাকার ফলে তাঁর মধ্যে আধ্যাত্মিক চিন্তা-ভাবনার উন্মেষ হয়। দেশে ফিরে তিনি ক্যামেরা হাতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ালেও সেখানেও শান্তি পাননি। শেষমেশ তিনি আধ্যাত্মিক সাধনার পথ বেছে নেন এবং বিভিন্ন তীর্থস্থানে ভ্রমণ শুরু করেন।
পরিবারের উদ্বেগ এবং অভয়ের স্বাধীনতা
অভয়ের আধ্যাত্মিকতায় প্রবল ঝোঁক দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন তাঁর বাবা-মা। একসময় তাঁরা তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত হয়ে পুলিশের সাহায্যও নিয়েছিলেন। তবে অভয় মাস ছয়েক আগে পরিবারের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে আসেন।
অভয়ের বাবা করণ সিংহ বলেন, ‘‘ও নিজের জন্য যা ভাল মনে করছে, সেটাই করছে। আমি ওর উপর কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। ওর নিজের জীবন ওর নিজের মর্জি অনুযায়ী চলবে।’’
উপসংহার
অভয় সিংহ ওরফে ‘আইআইটি বাবা’র এই ঘটনা একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। তাঁর খ্যাতি কেন আখড়ার অন্য সাধুদের কাছে সমস্যা হয়ে উঠল? মাদি আশ্রমের গোপন তথ্য কী? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও পুরোপুরি মেলেনি। তবে অভয়ের বক্তব্য এবং তাঁর জীবনের এই রহস্যময় অধ্যায় মানুষকে আকর্ষিত করে চলেছে।
কুম্ভমেলায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ছড়াল আতঙ্ক, পুড়ল একাধিক তাঁবু