পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আজকের শুনানি স্থগিত করা হয়েছে। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঞার ডিভিশন বেঞ্চ মামলার শুনানি করার কথা ছিল। তবে, উভয়পক্ষের জমা দেওয়া রিপোর্টগুলি বিশদে পড়ার জন্য সময় চেয়ে নিয়েছেন বিচারপতিরা।
শুনানি কেন স্থগিত?
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে তাঁর আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে জামিন আবেদন জমা দিয়েছিলেন। এর বিপরীতে ইডি (ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) তাদের তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়। একইসঙ্গে, পার্থের আইনজীবীরাও ইডির দাবির বিরোধিতা করে পাল্টা রিপোর্ট পেশ করেন। বিচারপতিরা জানিয়েছেন, এই রিপোর্টগুলি খতিয়ে দেখতে কিছুটা সময় লাগবে। এ কারণেই আজকের (সোমবার) শুনানি স্থগিত রাখা হয়েছে। পরবর্তী শুনানি বুধবার বা বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের যুক্তি
পার্থের আইনজীবী মুকুল রোহতগি আদালতে জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেলের বাড়ি থেকে কোনও নগদ অর্থ উদ্ধার হয়নি। যাঁর বাড়ি থেকে নগদ অর্থ উদ্ধার হয়েছিল, সেই অর্পিতা মুখোপাধ্যায় সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া, অর্থ তছরুপ প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ) অনুযায়ী পার্থ ইতিমধ্যেই জেলবন্দি অবস্থায় সর্বোচ্চ সাজার এক-তৃতীয়াংশ সময় কাটিয়ে ফেলেছেন। বয়স এবং স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে জামিন দেওয়া উচিত বলেও যুক্তি দেখিয়েছেন তাঁর আইনজীবী।
ইডির বিরোধিতা
ইডির তরফ থেকে আদালতে দাবি করা হয়েছে, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়, যাঁর বাড়ি থেকে নগদ অর্থ উদ্ধার হয়েছিল, তিনি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। পার্থ শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীনই নিয়োগে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে পাওয়া প্রমাণের ভিত্তিতে এই মামলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল বলে দাবি করেছে ইডি।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঞা মন্তব্য করেছেন, কোনও অভিযুক্তকে চার্জশিট দাখিল না করে এত দীর্ঘ সময় জেলে রাখা সঠিক নয়। ‘আড়াই-তিন বছর কম সময় নয়,’ বলেছেন তিনি। আদালত আরও উল্লেখ করেছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ২০২২ সালের জুলাই মাসে গ্রেফতার হন। তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতার বাড়ি থেকে নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়, যা নিয়োগ দুর্নীতির টাকা বলে ইডি দাবি করে।
মামলার ভবিষ্যৎ
পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখনো জেলবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। অর্পিতা জামিনে মুক্তি পেলেও পার্থের ভবিষ্যৎ এখনও আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। বিচারপতিরা রিপোর্ট পড়ার পরই এই মামলার পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ হবে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
এই মামলার বিষয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে যেমন চর্চা চলছে, তেমনই সাধারণ মানুষের মধ্যেও কৌতূহল রয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতি এবং এর সঙ্গে যুক্ত বিশাল অঙ্কের অর্থের বিষয়টি নিয়ে বিচারব্যবস্থার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এই মামলার দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে।
সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী শুনানির আগে এই মামলার কোনো নতুন দিক প্রকাশিত হলে তা সমাজে আরও আলোচনার জন্ম দেবে।

