Friday, March 21, 2025

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে ইডি

Share

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন

প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের কাছে জামিনের আবেদন করেছিলেন। এই মামলার শুনানিতে ইডির কার্যক্ষমতা এবং সাফল্যের হার নিয়ে কঠোর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটিকে। বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঞার বেঞ্চে ইডির আইনজীবীর কাছে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়, “আপনাদের আনা মামলায় কত জনের বিরুদ্ধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে? এই হার কি ৬০-৭০ শতাংশের কাছাকাছি?” বিচারপতিরা মন্তব্য করেন, “এই হার যদি অত্যন্ত কম হয়, তা হলে বিষয়টি উদ্বেগজনক।”

জামিনের আর্জি এবং ইডির সওয়াল

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পক্ষে শীর্ষ আদালতে সওয়াল করেন প্রবীণ আইনজীবী মুকুল রোহতগি। তিনি আদালতে দাবি করেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে কোনও নগদ অর্থ উদ্ধার হয়নি। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, যাঁর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার হয়েছিল, সেই অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই জামিন পেয়েছেন।

রোহতগি আরও যুক্তি দেন যে, পার্থ জেলবন্দি অবস্থায় ইতিমধ্যেই অর্থ তছরুপ প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ)-এর অধীনে সর্বোচ্চ শাস্তির এক-তৃতীয়াংশ সময় কাটিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি, পার্থের বয়স এবং শারীরিক অবস্থার দিকটি বিবেচনায় নিয়ে তাঁকে জামিন দেওয়া উচিত বলে আদালতে অনুরোধ করেন তিনি।

অন্যদিকে, ইডির পক্ষে কেন্দ্রীয় অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু পাল্টা যুক্তি দেন যে, প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির সময় পার্থ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন এবং তাঁর আমলেই এই দুর্নীতির শিকড় ছড়ায়। তাছাড়া, অর্পিতা মুখোপাধ্যায় যাঁর বাড়ি থেকে বিপুল নগদ অর্থ উদ্ধার হয়েছিল, তিনি পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগী’ ছিলেন বলে দাবি করে ইডি।

সুপ্রিম কোর্টের কঠোর পর্যবেক্ষণ

দু’পক্ষের সওয়াল পর্ব শেষে বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঞা ইডির আইনজীবীর কাছে কড়া ভাষায় জানতে চান, “যদি তিনি (পার্থ) দোষী না হন, তা হলে কত দিন তাঁকে জেলে রাখা হবে? আড়াই থেকে তিন বছর সময় খুব কম নয়।” এই পর্যবেক্ষণ ইডির তদন্ত পদ্ধতি এবং বিচারের গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

মামলার পরবর্তী শুনানি

আগামী সোমবার এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। সেদিন শীর্ষ আদালত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন আবেদন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারে। তবে সুপ্রিম কোর্টের কড়া মন্তব্য ইডির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে এবং মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে।

ইডির সাফল্যের হার নিয়ে উদ্বেগ

এই শুনানির পর ইডির সাফল্যের হার নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার কার্যকারিতা এবং স্বচ্ছতার দিকে নতুন আলো ফেলেছে। বিচারপতিদের মতে, যদি সংস্থার দোষী সাব্যস্ত করার হার অত্যন্ত কম হয়, তবে তাদের আনা অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এর ফলে, শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনই নয়, ভবিষ্যতে ইডির নানা মামলার তদন্ত এবং বিচারপ্রক্রিয়া নিয়েও আইনি মহলে আলোচনা জোরদার হতে পারে।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন মামলার শুনানি প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার দক্ষতার দিকে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ইডির সাফল্যের হার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কড়া পর্যবেক্ষণ যেমন তাদের কার্যক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, তেমনই মামলার ভবিষ্যৎ প্রক্রিয়ার ওপর নজর থাকবে আইন এবং রাজনীতির অঙ্গনে।

Read more

Local News