Monday, December 1, 2025

পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জামিন দিল সুপ্রিম কোর্ট: চার্জ গঠনের নির্দেশ

Share

পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে

সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পেলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ইডি-র (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) মামলায় এই জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জেলে থাকা পার্থের মুক্তি নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল, তা শুক্রবার শেষ হল। তবে কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এই মাসের মধ্যেই মামলার চার্জ গঠন সম্পন্ন করতে হবে।

পার্থের জামিন সংক্রান্ত শুনানি শেষ হয়েছিল ৪ ডিসেম্বর। কিন্তু সেই সময় রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছিলেন বিচারপতিরা। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য ছিল, পার্থ যদি সত্যিই দুর্নীতিতে জড়িত থাকেন, তবে তাঁর এত সহজে জামিন পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। মামলার শুনানিতে আদালত আরও উল্লেখ করেছিল, পার্থ নিয়োগ দুর্নীতিতে ‘ডামি’ বা কৃত্রিম ব্যক্তিকে সামনে রেখে কাজ করেছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

আদালতের পর্যবেক্ষণ এবং মন্তব্য

২০২২ সালে পার্থের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার হয়েছিল। সেই ঘটনায় অর্পিতার পাশাপাশি পার্থকেও গ্রেফতার করা হয়। ইডি-র মতে, নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থ ছিলেন মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন। পার্থের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তাঁর মন্ত্রিত্বের ক্ষমতা ব্যবহার করে দুর্নীতির কাজে লিপ্ত হয়েছিলেন।

পার্থের আইনজীবী মুকুল রোহতগি আদালতে যুক্তি দিয়েছিলেন যে, এই মামলায় গ্রেফতার হওয়া অন্য অভিযুক্তরা ইতিমধ্যেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। এমনকি, অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তবে বিচারপতি সঞ্জয় কান্ত এ বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করেছিলেন, “অন্য অভিযুক্তরা হয়তো জামিন পেতে পারেন, কারণ তাঁরা মন্ত্রী ছিলেন না। কিন্তু এক জন মন্ত্রী, যিনি দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে সন্দেহের মধ্যে রয়েছেন, তাঁর জামিন দেওয়া হলে সমাজে ভুল বার্তা যাবে।”

বিচারপতি আরও বলেন, “মন্ত্রী হিসেবে পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিশ্চয়ই নিজেই নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিতেন না। তাই তিনি হয়তো কোনও ডামি ব্যক্তিকে সামনে রেখে দুর্নীতির কাজ করেছেন। ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে যে পরিমাণ টাকা উদ্ধার হয়েছে, তা ঘুষের টাকা না হলে অন্য কোনও কারণ থাকতে পারে না। যদি তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই জামিন দেওয়া হয়, তবে তা তদন্ত প্রক্রিয়ার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।”

জামিনের শর্ত এবং পরবর্তী পদক্ষেপ

সুপ্রিম কোর্ট পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জামিন দিলেও, এই মাসের মধ্যেই মামলার চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। কোর্ট জানিয়েছে, যদি চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়, তবে এই মামলার সুষ্ঠু নিষ্পত্তি সম্ভব হবে না। জামিনের শর্ত অনুযায়ী, পার্থকে তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে এবং কোনওভাবেই তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়া চলবে না।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলা এবং পার্থের ভূমিকা

২০২২ সালের নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি-র তদন্তে উঠে এসেছিল একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। কেন্দ্রীয় সংস্থা দাবি করেছিল, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ ঘুষের লেনদেন হয়েছিল, যার বড় অংশই অর্পিতা এবং পার্থের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছিল। অর্পিতার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের পরে ইডি জানিয়েছিল, পার্থ এই দুর্নীতির মূল হোতা।

পার্থের পক্ষ থেকে আদালতে দাবি করা হয়েছিল, তাঁর বাড়ি থেকে কোনও টাকা উদ্ধার হয়নি এবং তিনি কোনও আর্থিক লেনদেনে জড়িত ছিলেন না। তবে ইডি-র প্রমাণ এবং অর্পিতার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এই মামলার প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল।

উপসংহার

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন মঞ্জুর হওয়া নিয়োগ দুর্নীতি মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। তবে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগে চার্জ গঠনের নির্দেশ এবং তদন্ত প্রক্রিয়ার অগ্রগতি স্পষ্ট করবে যে, পার্থের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কতটা প্রমাণিত হয়। এখন নজর থাকবে এই মামলার পরবর্তী ধাপে এবং চার্জ গঠনের সময় কী তথ্য উঠে আসে তার ওপর।

Read more

Local News