ওয়াকফ আন্দোলনে উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদ!
ওয়াকফ আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে জেলাজুড়ে শুরু হওয়া উত্তাল আন্দোলনে কয়েক দিন ধরে ধ্বংসের ছবি দেখে এসেছে মুর্শিদাবাদ। ধুলিয়ান, সুতি, জঙ্গিপুর— একের পর এক এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর— পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে উঠেছিল যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপে নামতে হয়।
তবে আশার খবর, সোমবার থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে। নতুন কোনও অশান্তির খবর নেই। পুলিশের টহল, কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুটমার্চ আর প্রশাসনের সক্রিয় নজরদারিতে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসছে উত্তেজিত জনপদগুলি। ইন্টারনেট এখনো বন্ধ, কারণ ‘গুজবের আগুনে’ যেন আর কেউ উস্কানি না পায়।
রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন— “যাঁরা অশান্তি পাকাচ্ছেন বা পেছন থেকে মদত দিচ্ছেন, তাঁদের পাতাল থেকেও খুঁজে বার করা হবে। কাউকে ছাড়া হবে না।” ইতিমধ্যেই ২০০-র বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একাধিক স্পর্শকাতর এলাকায় চালানো হচ্ছে বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি।
বিক্ষোভের মূল কেন্দ্র সুতি, সামশেরগঞ্জ, ধুলিয়ানের কিছু পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের অনেকেই আবার ফিরে এসেছেন প্রশাসনের উদ্যোগে। চলছে ত্রাণ বিতরণ, এবং গ্রামে ফেরত আসা পরিবারগুলিকে আশ্বাস দিচ্ছেন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারাও।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও আইনি পদক্ষেপ
এই অস্থির পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হাই কোর্টে মামলা করেন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোতায়েনের নির্দেশ আসে। সুপ্রিম কোর্টেও এই বিষয়ে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাকারীর দাবি— ‘ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা গণতান্ত্রিকভাবে হওয়া উচিত, সহিংসতা নয়।’
মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তির ডাক দিয়েছেন। বলেছেন, “প্ররোচনায় পা দেবেন না। কেউ যেন নিজের হাতে আইন তুলে না নেন। সকলের জন্যই আমাদের সহমর্মিতা আছে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, রাজ্যে ওয়াকফ সংশোধনী আইন কার্যকর করতে দেবেন না।
রাজনৈতিক পাল্টা কটাক্ষ
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই আন্দোলনের পেছনে কংগ্রেসের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “কংগ্রেস ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির ভাইরাসে আক্রান্ত। ওরা বাবাসাহেব আম্বেডকরের আদর্শের অপমান করেছে।”
যদিও সংসদের দু’কক্ষেই পাশ হয়ে গেছে সংশোধিত ওয়াকফ বিল, তবুও রাজ্য সরকার চাইলে তা কার্যকর না-ও করতে পারে বা বিধানসভায় বিরোধী প্রস্তাব পাশ করিয়ে রাষ্ট্রপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। এর আগে সিএএ-এনআরসির ক্ষেত্রেও একই পথে হেঁটেছিল তৃণমূল। এবারও কি সেই কৌশল নেবে রাজ্য সরকার?
বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও প্রশাসন সতর্ক। শান্তি যেন টেকসই হয়, সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ এবং প্রশাসন— কারণ একটা ভুলে আবারও জ্বলতে পারে গোটা জেলা।
মুর্শিদাবাদে ধীরে ধীরে স্বস্তির হাওয়া, ঘরছাড়াদের ফেরাতে প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ