পাক সেনাপ্রধানের যুদ্ধ জিগির!
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির যেন মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চেয়ে রীতিমতো আগ্রাসী অবস্থান নিয়েছেন তিনি। আর তারই ‘চাপা উত্তাপ’ ছড়িয়ে পড়ছে সীমান্তের ওপারে। পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর নৃশংস হামলা সেই উত্তাপেরই এক বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
গত কয়েকদিনে কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন নিরীহ পর্যটকরা। হামলার নেপথ্যে ছিল ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ বা টিআরএফ, যারা মূলত লশকর-এ-তৈবা-র ছায়া সংগঠন। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা মোটেও বিচ্ছিন্ন নয়। বরং ভারতের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের প্রেক্ষাপট রচনারই অংশ।
জেনারেল মুনিরের এই আগ্রাসী মনোভাবের পিছনে রয়েছে দেশটির জর্জরিত অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি। দেশের দুই প্রদেশ— বালোচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় বাড়ছে বিদ্রোহ। সেনাবাহিনী সেখানে কার্যত ব্যর্থ। সাধারণ মানুষের চোখে সেনার গ্রহণযোগ্যতা নেমে এসেছে তলানিতে। সেই ব্যর্থতা ঢাকতেই মুনির চান ভারতের সঙ্গে এক “ছোটখাটো যুদ্ধ”, যাতে আবার জাতীয়তাবাদের ঢেউ তুলে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়।
পাকিস্তান ইতিমধ্যেই একাধিক যুদ্ধে ভারতের মুখোমুখি হয়েছে। তবে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান ভেঙে জন্ম নেয় বাংলাদেশ— যা পাকিস্তানের ইতিহাসে চরম ধাক্কা ছিল। এবার ফের বালোচিস্তান বা খাইবার পাখতুনখোয়ার স্বাধীনতার শঙ্কায় ভীত মুনির। সেই আশঙ্কা থেকেই যুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখার মরিয়া চেষ্টা করছেন তিনি।
জেনারেল মুনির নিজেও রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ক্ষমতা হারানোর পেছনে মুনিরের ভূমিকা নিয়ে রয়েছে প্রবল আলোচনা। এমনকি ইমরানের গ্রেফতারির পর দেশের বিভিন্ন শহরে আন্দোলনের মুখে সেনাবাহিনী যে নির্মম দমন চালায়, তার প্রধান কারিগর ছিলেন মুনির। ফলে সেনাপ্রধান হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তাও ব্যাপকভাবে ধাক্কা খেয়েছে।
এদিকে, বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধলে আমেরিকা বা চিনের সমর্থন পাবে বলে মনে করলেও বাস্তবটা ভিন্ন। পহেলগাঁও হামলার পর গোটা বিশ্ব ভারতের পাশে রয়েছে। এমনকি রাশিয়াও ভারতের সঙ্গেই রয়েছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিকরা।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, দুই দেশই পরমাণু শক্তিধর। ভারত বর্তমানে ১৮০টি পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী, পাকিস্তানের রয়েছে ১৭০টি। এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ মানেই শুধুই বিপর্যয়— উভয় দেশের জন্যই। করাচির শেয়ারবাজারে পতনের মাধ্যমে সেই আতঙ্কের আঁচ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
অতএব, প্রশ্ন উঠছে— আসিম মুনিরের এই যুদ্ধ চাওয়া কি বাস্তব সম্মুখসমরের প্রস্তুতি, নাকি শুধুই নিজের অবস্থান ও সেনার মর্যাদা বাঁচানোর মরিয়া কৌশল? ভারতের কূটনৈতিক শিবির এখন সতর্ক, পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে হিসেবি পদক্ষেপ নিতে চাইছে নয়াদিল্লি।
একটানা উত্তেজনার এই আবহে উপমহাদেশের সাধারণ মানুষ এখন কেবল একটাই প্রার্থনা করছেন— হোক না কৌশলগত যুদ্ধ, কিন্তু আর যেন রক্ত না ঝরে।
পহেলগাঁও হামলা: বলিউডের তারকাদের ক্ষোভের মুখে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র বার্তা

