মোদীর অভিযোগে মমতার খতিয়ানী পাল্টাঘাত!
পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন নিয়ে রাজনৈতিক তরজা নতুন নয়, তবে এবার তা আরও তীব্র আকার নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোমুখি অবস্থানে। মোদী যখন আলিপুরদুয়ারের জনসভায় পশ্চিমবঙ্গকে ‘পাঁচ সঙ্কটে’ জর্জরিত বলে দাবি করলেন, তখন মমতা একদিনের ব্যবধানে ১১ দফা উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা তুলে ধরে তাঁর জবাব দিলেন—তাও শুধু এক জেলা আলিপুরদুয়ারকে ঘিরেই।
মোদীর ভাষণে রাজ্যের ‘পাঁচ সঙ্কট’
প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্যে উঠে আসে রাজ্যের পাঁচটি বড় সংকটের কথা:
১. সমাজে অরাজকতা ও হিংসা ছড়িয়ে পড়া
২. মা-বোনেদের নিরাপত্তার অভাব
৩. যুবসমাজে বেকারত্বের হতাশা
৪. প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা
৫. গরিবের অধিকারে হস্তক্ষেপ
মোদীর মতে, এ সবই শাসক দলের স্বার্থপর রাজনীতির ফল, যা সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
মমতার পাল্টা পোস্ট: উন্নয়নের হালচিত্র
এ বক্তব্যের ঠিক পরদিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে প্রধানমন্ত্রীকে পাল্টা জবাব দেন। তিনি জানান, ‘‘আলিপুরদুয়ারে আমাদের সরকার যা করেছে, তা খাটো করে দেখা যায় না।’’ তিনি ১১টি দফায় জেলার স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিকাঠামো, সামাজিক সুরক্ষা, শিল্প এবং জনজাতি উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন।
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক:
- সামাজিক প্রকল্প:
- লক্ষ্মীর ভান্ডার: ৩.৫৭ লক্ষ মহিলা উপভোক্তা
- খাদ্যসাথী: ১২.৯১ লক্ষ মানুষ
- সবুজ সাথী: ২.৫৪ লক্ষ ছাত্রছাত্রী
- রূপশ্রী: ৪৬,০০০ মেয়ে
- স্বাস্থ্য ও শিক্ষা:
- স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ৪ লক্ষেরও বেশি মানুষ উপকৃত
- শিক্ষাশ্রী, ঐক্যশ্রী, তরুণের স্বপ্নে বহু শিক্ষার্থী পেয়েছে ট্যাব
- জমির পাট্টা:
- ৩৭,০০০-এরও বেশি জমির পাট্টা বিতরণ
- যার মধ্যে রয়েছে শরণার্থী, বনাঞ্চল ও চা-বাগান কর্মীদের পাট্টাও
- কর্মসংস্থান:
- ২.৮৪ লক্ষ মানুষের জন্য তৈরি হয়েছে ১.২৮ কোটি কর্মদিবস
- ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা
- বাড়তি উন্নয়ন প্রকল্প:
- জলস্বপ্ন, বাংলার বাড়ি, কর্মশ্রী
- চা-বাগান শ্রমিক, কামতাপুরী ও রাজবংশী উন্নয়ন নিয়েও বিস্তারিত উদ্যোগ
রাজনৈতিক বার্তা ও বাস্তব লড়াই
মমতা বলেন, “আমরা সবসময় মানুষের পাশে থাকি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে উন্নয়নই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।” তাঁর দাবি, আলিপুরদুয়ারের মানুষ অন্তত একটি রাজ্য প্রকল্পের সুফল পেয়েছেন।
এই পাল্টা খতিয়ান রাজনৈতিক বিতর্কের ধার বাড়ালেও, এক অর্থে রাজ্যের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের প্রতিযোগিতাকেই সামনে আনছে। মোদীর কেন্দ্রীয় বার্তা ও মমতার প্রান্তিক উন্নয়নের বাস্তবচিত্রের দ্বন্দ্বেই নতুন করে সামনে এল বাংলা রাজনীতির মৌলিক দ্বন্দ্ব—কথা বনাম কাজ।
বেলের পানা: মোগল দরবার থেকে ওড়িশার পুজোর প্রসাদ—ভারতের প্রাচীন শরবতের আশ্চর্য যাত্রা

