Monday, December 1, 2025

“পাঁচ বছর দেরি হয়ে গেল”— শিষ্য আকাশদীপের সাফল্যে গর্বিত ‘গুরু’ অরুণ লাল

Share

শিষ্য আকাশদীপের সাফল্যে গর্বিত ‘গুরু’ অরুণ লাল!

২০১৯ সালে রঞ্জি ট্রফির মঞ্চে বাংলা দলের হয়ে প্রথমবার মাঠে নামা, তারপর পাঁচ বছরের কঠিন পথচলা— সেই আকাশদীপ এখন ভারতীয় টেস্ট দলে ১০ উইকেটের মালিক। এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সে যেমন নজর কেড়েছে গোটা ক্রিকেটবিশ্ব, তেমনই উচ্ছ্বাসে ভেসেছেন এক মানুষ— যিনি প্রথমদিন থেকেই জানতেন, “এই ছেলে একদিন ভারতের হয়ে খেলবেই।” তিনি অরুণ লাল।

ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং বাংলা দলের প্রাক্তন কোচ অরুণ লাল আকাশদীপকে প্রথম সুযোগ দিয়েছিলেন বাংলা দলে। তাঁরই চোখে প্রথম ধরা পড়েছিল ভবিষ্যতের ভারতীয় ক্রিকেটার। আনন্দবাজার ডট কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অরুণ বলেন, “আমার খুব দুঃখ হয় এই ভেবে যে এই দিনটা আসতে ওর পাঁচ বছর লেগে গেল। ওর মধ্যে সেই সামর্থ্য বহু আগেই ছিল। ২০১৯-২০ মরসুমেই আমি বুঝেছিলাম— এই ছেলে ভারতীয় দলে খেলবেই।”

আকাশদীপের অনন্য গুণগুলির কথা জানালেন অরুণ

আকাশের বোলিংয়ের অন্যতম শক্তি তার নিখুঁত সিম পজিশন এবং বলের সুইং। অরুণ বলেন, “ও যেভাবে সিমে বল ফেলে ভিতরের দিকে আনতে পারে, তা অসাধারণ। পাশাপাশি গতির ধারাবাহিকতা এবং দীর্ঘ স্পেল চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা— সব মিলিয়ে ও এক আদর্শ লাল বলের বোলার।”

শুধু প্রতিভা নয়, আকাশের চরিত্রগত গুণও মুগ্ধ করেছে অরুণকে। বলেন, “দল থেকে বাদ পড়লেও কোনও দিন অভিযোগ করেনি। এক সময় ইডেনের ডর্মিটরির অত্যন্ত খারাপ পরিবেশে থেকেও কিছু বলেনি। শুধু খেলে গিয়েছে। ওর মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকত।”

তবে আকাশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আত্মবিশ্বাসের অভাব। অরুণ মনে করেন, “প্রথম দিকে ও বুঝতেই পারত না ও কতটা প্রতিভাবান। বারবার নিজেকে নিয়ে সন্দেহ করত। আমি ওকে সাহস দিয়েছি, আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছি। ধীরে ধীরে ও নিজেকে চিনেছে।”

ছাত্রের চোখে ‘গুরু’ অরুণ লাল

টেস্ট অভিষেকের পরই আকাশদীপ ফোন করেছিলেন তাঁর ‘গুরু’কে। অরুণের কথা স্মরণ করে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “যখন আমার নিজের উপর ভরসা ছিল না, তখনও অরুণ স্যার আমাকে বিশ্বাস করতেন। সেই ভরসা ছাড়া আমি আজকের জায়গায় পৌঁছোতে পারতাম না।” অরুণ তখন বলেছিলেন, “আমি তো আগেই বলেছিলাম তুমি ভারতের হয়ে খেলবে।”

নিজেকে নিজেই গড়ে তোলা লড়াকু আকাশদীপ

বিহারের সাসারাম থেকে উঠে আসা আকাশ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করেছেন। অরুণ জানান, “ওর গ্রামের পাশেই পাহাড় আছে। সেখানে দৌড়ে উঠত-নামত। সেই সব ভিডিয়ো আমাকে পাঠাত। ফিটনেসে ওর আত্মনিয়ন্ত্রণ দেখলে অবাক হতে হয়।”

পরিবার ও আবেগের সংযোগ

এজবাস্টনের সাফল্য আকাশ উৎসর্গ করেছেন ক্যানসার আক্রান্ত দিদিকে, যিনি তাকে রান্না করে খাওয়াতে চান। আকাশ বলেছেন কীভাবে এক সময় কাউকে না জানিয়ে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলেন। অরুণ বলেন, “ওর লড়াইটা আমি জানি। পরিবারের দায়িত্ব নিয়েও ও নিজেকে তৈরি করেছে। ছেলেটা সত্যিই দারুণ।”

এখনও পর্যন্ত ভারতের হয়ে ৮টি টেস্টে ২৫ উইকেট— আর সেই পথের শুরুতে যিনি পাশে ছিলেন, সেই ‘গুরু’ অরুণ লাল আজও স্বপ্ন দেখেন তাঁর শিষ্যকে নিয়ে। বলেন, “ওর সেরা সময় এখনও আসেনি। অনেক পথ বাকি। ও ভারতের হয়েই ইতিহাস গড়বে।”

বিকৃত ছবি ও ‘দাদা সংস্কৃতি’ নিয়ে সরব তৃণমূল-কন্যা রাজন্যা হালদার

Read more

Local News