Saturday, February 22, 2025

পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা তুঙ্গে: চিনের সহায়তায় হুথিদের শক্তি বৃদ্ধি, টমাহকের আঘাতে জবাব দিল আমেরিকা

Share

পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা তুঙ্গে

পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধের উত্তাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন বছরের শুরুতেই ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের উপর আমেরিকার মারণাত্মক ‘টমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ প্রমাণ করল, লোহিত সাগরের প্রভাব বাড়ানো নিয়ে একটি গুরুতর দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। এই সংঘাতে চিনের গোপন ভূমিকা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। সম্প্রতি ইহুদি সংবাদ সংস্থা দাবি করেছে, হুথিদের উন্নত অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করছে চিন, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হুথিদের বিরুদ্ধে মার্কিন আক্রমণ

৪ জানুয়ারি, ২০২৫-এ যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কম্যান্ড জানায়, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের দমন করতে অত্যাধুনিক ‘টমাহক’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। লোহিত সাগরে মোতায়েন মার্কিন রণতরী ‘হ্যারি এস ট্রুম্যান’ থেকে এই হামলা চালানো হয়। উল্লেখ্য, পশ্চিম এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্থল, বিমান ও নৌসেনার অপারেশনের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এই সেন্ট্রাল কম্যান্ডের অধীনে।

হুথিদের বিরুদ্ধে এই হামলা প্রথম নয়। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাস থেকেই পেন্টাগন তাদের দমন করতে সক্রিয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বি-২ স্পিরিট’ স্টেলথ বোমারু বিমান এবং যুদ্ধজাহাজ ব্যবহার করা হয়েছে। তবুও হুথিদের প্রতিরোধের ক্ষমতা এখনও অক্ষুণ্ণ।

পশ্চিম এশিয়ায়

‘টমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র: আমেরিকার ভয়ঙ্কর অস্ত্র

‘টমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা হয়েছিল ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়। ভূমিতে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানার ক্ষেত্রে এটি অতুলনীয়। আনুমানিক ১,৬০০ কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধজাহাজ বা ডুবোজাহাজ থেকেও নিক্ষেপ করা যায়। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘টমাহক’ যুদ্ধক্ষেত্রে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে পরিচিত।

এটির ওজন প্রায় দেড় টন এবং এটি ঘণ্টায় ৮০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে। আধুনিক জিপিএস এবং টেরেন কনট্যুর ম্যাচিং প্রযুক্তি যুক্ত থাকায় এটি অত্যন্ত নির্ভুল। মাটির খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়ার ক্ষমতা থাকায় এটি শত্রুদের রাডার এড়াতে সক্ষম।

চিনের গোপন হাত

ইহুদি সংবাদ সংস্থার মতে, চিন গোপনে হুথিদের উন্নত অস্ত্র এবং গোলাবারুদ সরবরাহ করছে। তারা দাবি করেছে, চিনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে হুথিরা এখন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে সক্ষম। এমনকি মাটির গভীরে বাঙ্কার বানিয়ে সেখানে অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করছে তারা। এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর আমেরিকার গোয়েন্দারা হুথিদের অস্ত্র সরবরাহে জড়িত একাধিক চিনা সংস্থাকে চিহ্নিত করেছে।

লোহিত সাগরের গুরুত্ব

লোহিত সাগর দিয়ে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য পরিবহণ করে চিন। এই অঞ্চলে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় শক্তিগুলির প্রভাব কমাতে হুথিদের সঙ্গে গোপন আঁতাত করেছে বেজিং। তাদের উদ্দেশ্য, হুথিদের দিয়ে শত্রু দেশগুলির বাণিজ্য রুটে আঘাত হানা।

ভূ-রাজনৈতিক জটিলতা

পশ্চিম এশিয়ায় হুথিদের কার্যক্রম চিনের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। লোহিত সাগরে আমেরিকার ব্যস্ততা বাড়ালে তাইওয়ান নিয়ে চিনের কার্যক্রম সহজ হবে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই কৌশলগত অবস্থান নিয়ে এগোচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত

হুথিদের আক্রমণে লোহিত সাগর দিয়ে বাণিজ্য পরিবহণ কমে গেছে। এর ফলে এশিয়া-ইউরোপের মধ্যে পণ্য পরিবহণের খরচ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতসহ একাধিক দেশ তাদের নৌবাহিনী মোতায়েন করেছে।

ভবিষ্যৎ সংকট

ইয়েমেনে হুথিদের শক্তি বৃদ্ধি এবং চিনের সক্রিয় ভূমিকা পশ্চিম এশিয়ায় নতুন ধরনের সংঘাত ডেকে আনতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই সংঘাত বৃহত্তর যুদ্ধে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের টমাহক হামলা এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে হুথিদের শক্তি কমানোর পাশাপাশি তাদের অস্ত্র সরবরাহের উৎস বন্ধ করাই এখন আমেরিকা এবং তার মিত্র দেশগুলির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।

চিনের পর হংকংয়ে হানা দিল এইচএমপিভি! আতঙ্ক না ছড়িয়ে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ কেরলের

Read more

Local News