পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান
২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। যদিও দেশজুড়ে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে ২ সেপ্টেম্বর থেকে, তবুও পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন কারণে শুরু হতে কিছুটা দেরি হয়েছে। বিশেষ করে রাজ্যের নির্দিষ্ট কিছু বিধানসভা কেন্দ্রে এই অভিযানের উপর জোর দেওয়ার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৬৬টি আসনে কার্যত কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে।
সদস্য সংগ্রহ অভিযান: ফোকাস কেবল নির্দিষ্ট এলাকাতেই
বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী বাংলার ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে যেখানে ৪০ শতাংশের বেশি সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন, সেখানে সদস্য সংগ্রহের প্রচেষ্টা কম রাখা হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এই এলাকাগুলিতে বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি তুলনামূলক দুর্বল এবং ভোট ব্যাংক হিসেবে বিজেপির উপস্থিতি তেমন মজবুত নয়। এই দুর্বল এলাকায় সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালিয়ে শক্তির অপচয় না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এক সভায় বলেছিলেন, হিন্দুপ্রধান এলাকাগুলিতে বেশি করে সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালানো হবে। সম্প্রতি কলকাতায় এক সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সামনে শুভেন্দু বলেন, “হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করুন, আমরা তাদের সমর্থন পাব।” তার এহেন বক্তব্যে বোঝা যায়, বিজেপি মূলত হিন্দু ভোটারদের উপর নির্ভরশীল হয়ে সদস্য সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে।
শুভেন্দুর স্লোগান পরিবর্তন এবং কেন্দ্রীয় নির্দেশনা
গত জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে শুভেন্দু কেন্দ্রীয় স্লোগান ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ বন্ধ করার কথা বলেছিলেন। তার পরিবর্তে ‘যো হমারে সাথ, হম উনকা সাথ’ শ্লোগান তুলে ধরেন। যদিও এই বক্তব্যের জন্য রাজ্য বিজেপি আনুষ্ঠানিক ভাবে সমর্থন জানায়নি এবং সুকান্ত মজুমদার পাল্টা বক্তব্য দিয়েছিলেন। তবু শুভেন্দুর কথার প্রভাব পড়েছে রাজ্য বিজেপির কর্মকৌশলে।
এই বছর ২৭ অক্টোবর কলকাতায় অমিত শাহর আগমনে সদস্য সংগ্রহ অভিযান আরও গতিশীল হয়। শুভেন্দুর মন্তব্য অনুযায়ী, বিজেপি সদস্য সংগ্রহ অভিযানকে হিন্দুপ্রধান এলাকাগুলিতেই সীমাবদ্ধ রাখছে। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে দলের নেতারা এই কৌশলের পক্ষে প্রকাশ্যে তেমন কিছু মন্তব্য করতে রাজি নন।
৩০০-র বেশি দুর্বল এলাকায় বিশেষ প্রচেষ্টা নেই
বিজেপির সাংগঠনিক ধরন অনুযায়ী প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় প্রায় চার থেকে পাঁচটি মণ্ডল রয়েছে, যেখানে প্রতিটি মণ্ডলে ১০০ জন সক্রিয় সদস্য তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে রাজ্যের ৩০০টি মণ্ডল খুবই দুর্বল বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে বিজেপির উপস্থিতি কম এবং প্রচেষ্টা অর্থহীন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই এলাকাগুলিতে সদস্য সংগ্রহের জন্য তেমন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন, যেখানে দলের ভিত্তি নেই, সেখানে সদস্য সংগ্রহে শক্তি ব্যয় করা কার্যকরী হবে না।
সংখ্যালঘু প্রধান ৭৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতি কম জোর
পশ্চিমবঙ্গের ৭৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে ৪০ শতাংশের বেশি সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র আটটি কেন্দ্রে বিজেপি আগের নির্বাচনে ভালো ফল করেছিল। এই আটটি কেন্দ্র দক্ষিণবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর, বড়ঞা এবং তেহট্ট এবং উত্তরবঙ্গের করণদিঘি, হেমতাবাদ, মানিকচক এবং বৈষ্ণবনগর। বাকি ৬৬টি কেন্দ্রেই বিজেপির উপস্থিতি দুর্বল। এই এলাকাগুলিতে সদস্য সংগ্রহে তেমন প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে না। বিজেপির এক নেতা জানান, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও এই নীতিতে অনুমোদন দিয়েছেন এবং তাঁরা শক্তি বাঁচিয়ে দলীয় প্রচারণায় মনোযোগ দিতে চাচ্ছেন।
সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা এবং অভিযান চালানোর পরিকল্পনা
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এক কোটি সদস্যের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “দল সর্বশক্তি দিয়ে রাজ্যের সর্বত্রই অভিযান শুরু করেছে।” কিছু সংখ্যালঘু মানুষও স্বেচ্ছায় বিজেপির সদস্য হতে চাচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেছেন। এই অভিযানের দায়িত্বে থাকা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যও বলেন, “আমরা সব জায়গাতেই ঝাঁপাচ্ছি এবং লক্ষ্য পূরণের জন্য আত্মবিশ্বাসী।”
সর্বোপরি, এই সদস্য সংগ্রহ অভিযান বিজেপির নির্বাচনী প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিজেপির এই বিশেষ কৌশল নির্বাচনের আগে বাংলায় দলের কৌশলগত অবস্থানকে বোঝায়।