Thursday, January 30, 2025

পশ্চিমবঙ্গে গাঁজাসেবীর সংখ্যা কত? বিজেপি সাংসদের প্রশ্নে বিতর্কের ঝড়

Share

পশ্চিমবঙ্গে গাঁজাসেবীর সংখ্যা কত?

পশ্চিমবঙ্গে ঠিক কতজন ব্যক্তি গাঁজা সেবন করেন? জেলার ভিত্তিতে এই সংখ্যা কত? এই প্রশ্ন নিয়েই সংসদে সরব হলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। দেশের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের কাছে তিনি জানতে চেয়েছেন, সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা কত?

তবে শুধুই গাঁজাসেবীর সংখ্যা জানতে চাওয়াই নয়, সৌমিত্র খোঁজ নিতে চান সর্বমোট মাদকাসক্তের সংখ্যা সম্পর্কেও। বিশেষত, ‘নেশামুক্ত ভারত অভিযান’-এর প্রভাব কতটা কার্যকরী হয়েছে, তার মূল্যায়ন করাই তাঁর মূল উদ্দেশ্য। সংসদে তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন—

1️⃣ জেলাভিত্তিক মাদকাসক্তের সংখ্যা কত?
2️⃣ রাজ্যে মাদক নিয়ন্ত্রণে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং তার কার্যকারিতা কেমন?
3️⃣ মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন ও নেশামুক্তির জন্য কী পদক্ষেপ করা হয়েছে?

গাঁজা কি পশ্চিমবঙ্গের প্রধান মাদক?

সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মাদকাসক্তদের মধ্যে গাঁজাসেবীর সংখ্যাই সর্বাধিক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বরে সংসদে পেশ করা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে বাজেয়াপ্ত হওয়া মাদকের মধ্যে গাঁজার পরিমাণই সবচেয়ে বেশি

এটি শুধু বেশি নয়—বাজেয়াপ্ত হওয়া গাঁজার পরিমাণ আফিম, হেরোইন, কোকেন, চরস-সহ সব ধরনের মাদকের সম্মিলিত পরিমাণের প্রায় সাড়ে ছ’গুণ!

📌 ২০১৮-১৯ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী:
🔹 পশ্চিমবঙ্গে ২৭ হাজার কেজির বেশি গাঁজা বাজেয়াপ্ত হয়েছিল।
🔹 অন্যান্য সব মাদক মিলে বাজেয়াপ্ত হয়েছিল মাত্র ৪ হাজার কেজির একটু বেশি

এই তথ্য থেকেই স্পষ্ট, রাজ্যে মাদকাসক্তদের মধ্যে গাঁজাসেবীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি

কী বলছেন সাংসদ সৌমিত্র খাঁ?

সাংসদ নিজেও স্বীকার করেছেন যে, তাঁর অনুসন্ধানের কেন্দ্রবিন্দুতে মূলত গাঁজাসেবীরাই। তিনি বলেন,
❝এটা সত্যি যে, পশ্চিমবঙ্গে মাদকাসক্তদের মধ্যে বেশিরভাগই গাঁজা সেবন করেন। তবে আমি কেবল গাঁজাসেবীদের সংখ্যা জানতে চাইনি, সকল প্রকার মাদকাসক্তদের বিষয়েই তথ্য জানতে চেয়েছি।❞

তাহলে হঠাৎ কেন এই বিষয়ে প্রশ্ন তুললেন তিনি?
এই প্রসঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা,
❝আমি চাই, রাজ্যের মানুষকে নেশার কবল থেকে মুক্ত করতে। তার জন্য সরকারি নজরদারি দরকার। কেমন নজরদারি রয়েছে, কী তথ্য উঠে আসছে—সেগুলো বোঝা গেলে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হবে।❞

মাদকাসক্তদের উপর নজরদারি কীভাবে সম্ভব?

সাংসদের মতে, মদ্যপানকারীদের উপর সহজেই নজরদারি চালানো যায়, কারণ তাঁরা নির্দিষ্ট দোকান থেকে মদ কেনেন। ফলে বিক্রির পরিসংখ্যান রাখা সম্ভব। কিন্তু গাঁজা, কোকেন, হেরোইনের মতো মাদকের ক্ষেত্রে এই ধরনের নজরদারি করা কঠিন

তবে তাঁর বক্তব্য,
❝নেশার বিস্তার সাধারণত এলাকাভিত্তিক হয়ে থাকে। তাই যদি কিছু নির্দিষ্ট এলাকার উপর নজরদারি বাড়ানো যায়, তাহলে পরিস্থিতির বিশদ চিত্র পাওয়া যাবে।সংসদে এই প্রশ্ন তোলার মূল উদ্দেশ্যই হলো, কেন্দ্রীয় সরকার যে অর্থ বরাদ্দ করছে, তা সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে কিনা তা জানা।❞

বিজেপির প্রতিক্রিয়া

বিজেপির ভেতরেও এই প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র তথা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য কটাক্ষ করে বলেন,
❝জেলায় জেলায় তৃণমূলের ‘উন্নয়ন বাহিনীর’ নেতাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হয়, তাঁরা গঞ্জিকার প্রভাবে আচ্ছন্ন। হয়তো সেই কারণেই সৌমিত্র এই প্রশ্ন তুলেছেন!❞

উপসংহার

সাংসদ সৌমিত্র খাঁর এই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন ফেলেছে। বিজেপি এটিকে মাদকবিরোধী প্রচারণা হিসেবে ব্যাখ্যা করলেও, বিরোধীরা এটিকে রাজনৈতিক চাল বলে মনে করছে। তবে যে বিষয়টি স্পষ্ট, তা হলো গাঁজা সেবন পশ্চিমবঙ্গে একটি বড় সমস্যা, এবং এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

তদন্ত শেষ হলে, সরকারি পরিসংখ্যান থেকে হয়তো পরিষ্কার হবে পশ্চিমবঙ্গে প্রকৃতপক্ষে কতজন মাদকাসক্ত, এবং গাঁজাসেবন কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে

শ্রীদেবী-কন্যা খুশি কপূরের বদলে যাওয়া মুখ, নাক, ঠোঁটের গড়ন: অস্ত্রোপচারের গল্প নিজেই শেয়ার করলেন!

Read more

Local News