ছ’মাসে ৯০ লক্ষ ভক্তের আগমনে আত্মনির্ভর জগন্নাথ ধাম হয়ে উঠল দিঘার নতুন পরিচয়
ছ’মাস আগেও দিঘার পরিচয় ছিল একটাই— সমুদ্রসৈকতের পর্যটনস্বর্গ। কিন্তু অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে যে জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন হয়েছিল, মাত্র অর্ধবছরের মধ্যেই সেই মন্দির দিঘাকে এনে দিয়েছে দ্বিতীয় পরিচয়— তীর্থস্থান। বিতর্ক, মামলা, প্রসাদ নিয়ে কাটাছেঁড়া— কোনও কিছুই থামাতে পারেনি ভক্তদের ঢল। আর তার প্রমাণ গত ছ’মাসে ৯০ লক্ষেরও বেশি মানুষের পদচারণা।
জগন্নাথ ধাম— ভক্তদের ভরসায় নতুন তীর্থ
পুরীর আদলে নির্মিত এই মন্দিরকে ‘ধাম’ বলা যায় কি না— তা নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। আদালতেও মামলা তা নিয়ে। আবার মন্দিরের প্রসাদ নিয়ে নানা মতবিরোধও প্রকাশ্যে আসে। কিন্তু এসবই যেন তুচ্ছ হয়ে গিয়েছে ভক্তদের বিশ্বাসের কাছে। মন্দির কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে—
প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার মানুষ জগন্নাথ ধামে পুজো দিতে পৌঁছচ্ছেন।
মন্দিরের অছি পরিষদের সদস্য রাধারমণ দাস জানাচ্ছেন—
“দ্বারোদ্ঘাটনের পর থেকে ৯০ লক্ষেরও বেশি ভক্ত এসেছেন। উৎসবের সময় তো ঢল নামে।”
দিঘার সেই সাগর-নির্ভর অর্থনীতি এখন বড় অংশে নির্ভর করছে মন্দিরের ভক্ত সমাগমের ওপর। শহরের দোকান, হোটেল, পরিবহন— সবই নতুন করে প্রাণ পেয়েছে।
দৈনিক আয় প্রায় ৪ লক্ষ টাকা— আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর জগন্নাথ মন্দির
ভক্তদের ভিড় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপুল আর্থিক সচ্ছলতাও এসেছে মন্দিরের ঝুলিতে। রাধারমণ দাসের হিসাবে—
- হুন্ডিতে নগদ জমা: প্রায় ১ লক্ষ টাকা
- অনুদান ও উপহার: প্রায় ১ লক্ষ টাকা
- ভোগ-প্রসাদ বিক্রি: প্রায় ২ লক্ষ টাকা
সব মিলিয়ে মন্দিরের দৈনিক আয় ৪ লক্ষ টাকার কাছাকাছি! মাত্র ছ’মাসে এত আয়— দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে কার্যত ‘আত্মনির্ভর’ তীর্থস্থানে পরিণত করেছে।
বাড়ছে কর্মসংস্থান— ১৭০ জন কর্মী, আরও অনেকের জীবিকা মন্দির ঘিরে
মন্দির শুধু ভক্তদের তীর্থ হয়ে ওঠেনি; বহু মানুষের জীবিকাও দিয়েছে।
রাধারমণের তথ্য অনুযায়ী—
- মন্দির সেবা,
- নিরাপত্তা,
- হাউসকিপিং,
- সাফাইকর্মী—
মোট ১৭০ জন মানুষের চাকরি হয়েছে মন্দিরে। তাছাড়া বাইরে ছোট ব্যবসা, খাবারের দোকান, ভোগের দোকান, পরিবহন— সব ক্ষেত্রেই কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। ভক্ত সমাগম যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে স্থানীয়দের আয়ের উৎস।
রাসপূর্ণিমায় উপচে পড়া ভিড়— হিমশিম প্রশাসন
দিন কয়েক আগেই রাসপূর্ণিমা কেটেছে। সেই উৎসবে এমন ভিড় হয়েছিল যে পুলিশ-প্রশাসনকে সামাল দিতে ঘাম ঝরাতে হয়েছে। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয়— ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, এমনকি দক্ষিণ ভারতের বহু জায়গা থেকেও ভক্তরা আসছেন।
ভক্তদের মতে—
“পুরীর আদলে তৈরি হলেও দিঘার জগন্নাথ মন্দির এখন নিজস্ব পরিচয় তৈরি করেছে।”
মমতার স্বপ্নের প্রকল্পে পূর্ণতা— নিরাপত্তায় ‘জগন্নাথ ধাম পুলিশ আউট পোস্ট’
বছরের ৩০ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধনের পরে মন্দিরটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় ‘জগন্নাথ ধাম কালচারাল সেন্টার’ ট্রাস্টকে। কলকাতা ইসকনের রাধারমণ দাসকে দেওয়া হয় মন্দিরের প্রধান দায়িত্ব।
মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য স্থাপন করা হয়েছে ‘জগন্নাথ ধাম পুলিশ আউট পোস্ট’— ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে মন্দিরচত্বর।

