পরিকল্পনাহীন ব্যাটিংয়ে ডুবল ভারত
পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে রাজকোটের মাটিতে খেলতে নেমেছিল ভারত। জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল আর মাত্র একটি ম্যাচ। কিন্তু পরিকল্পনাহীন ব্যাটিং ও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় সিরিজ নিশ্চিত করার সুযোগ হাতছাড়া করল সূর্যকুমার যাদবরা। ইংল্যান্ডের ৯ উইকেটে ১৭১ রানের জবাবে ভারত শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৪৫ রানেই থেমে গেল। ফলে ২৬ রানে হার মানতে হল ভারতকে। যদিও সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে তারা।
বরুণের ম্যাজিক স্পেলে ইংল্যান্ড চাপে
ম্যাচের নায়ক ছিলেন বরুণ চক্রবর্তী। দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দিলেন কেকেআরের এই স্পিনার। মহম্মদ শামির প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে তাঁকে জয়ের উপহার দেওয়ার জন্য যেন মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন বরুণ। ইংল্যান্ডের প্রথম উইকেট পড়েছিল ৮৩ রানে। কিন্তু বরুণের ঘূর্ণিতে তাদের স্কোর একসময় নেমে আসে ৮ উইকেটে ১২৭-তে!
২৪ রান দিয়ে ৫ উইকেট তুলে নেন বরুণ। জস বাটলার (২৪), জেমি স্মিথ (৬), জেমি ওভারটন (০), ব্রাইডন কার্স (৩) ও জোফ্রা আর্চার (০)— সবাই বরুণের শিকারে পরিণত হন। ম্যাচের ১৪তম ওভারে টানা দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। যদিও সেই নজির গড়তে পারেননি, কিন্তু ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডারকে একাই ধসিয়ে দেন এই স্পিনার।
তবে ইংল্যান্ডকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন ওপেনার বেন ডাকেট ও লিয়াম লিভিংস্টোন। ডাকেট ২৮ বলে ৫১ রান করেন, আর লিভিংস্টোন চাপের মুখে খেলেন ২৪ বলে ৪৩ রানের কার্যকরী ইনিংস। শেষ দিকে আদিল রশিদ ও মার্ক উডের ১০ রান করে যোগদান দলকে ১৭১ রানে পৌঁছে দেয়।
ভারতের হতাশাজনক ব্যাটিং
১৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ভারত। ফর্মে থাকা সঞ্জু স্যামসন (৩) ব্যর্থ হন। সূর্যকুমার যাদবও তিন নম্বরে নেমে ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি। অভিষেক শর্মা ১৪ বলে ২৪ রান করলেও সেটাকে বড় ইনিংসে পরিণত করতে পারেননি। আগের ম্যাচে শতরান করা তিলক বর্মা (১৮) এদিন পরাস্ত হলেন রশিদের স্পিনে।
ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে রাজকোটের পিচ আচমকা বদলে যায়। স্পিন বেশি করতে থাকে, বাউন্সও হয়ে ওঠে অনিয়ন্ত্রিত। ভারতীয় ব্যাটাররা সেই চ্যালেঞ্জ সামলাতে পারেননি। বিশেষ করে রশিদের বল বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল। মিডল অর্ডারে হার্দিক পাণ্ড্য (৩৫ বলে ৪০) ও ওয়াশিংটন সুন্দরের (১৫ বলে ৬) মন্থর ব্যাটিং ভারতের কাজ আরও কঠিন করে দেয়।
ভারতীয় দলের অযথা বাঁহাতি-ডানহাতি ব্যাটিং কম্বিনেশন রাখার পরিকল্পনাও ব্যুমেরাং হয়ে যায়। শেষ দিকে অক্ষর পটেল (১৬ বলে ১৫) ও হার্দিক কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ওভারটনের বলে হার্দিক লং-অফে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের আশা শেষ হয়ে যায়।
শেষদিকে ধ্রুব জুরেল (২), শামি (৭) ও রবি বিশ্নোই (১) ব্যর্থ হন। বরুণ চক্রবর্তী অপরাজিত থাকেন ৫ রানে।
ইংল্যান্ডের বোলিং নৈপুণ্য
ইংল্যান্ডের হয়ে দুর্দান্ত বল করেন ওভারটন, ২৪ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি। জোফ্রা আর্চার ও ব্রাইডন কার্স ২টি করে উইকেট দখল করেন। রশিদ ১৫ রানে ১ উইকেট পান, কিন্তু তাঁর স্পেলই ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের আত্মবিশ্বাসে সবচেয়ে বড় ধাক্কা দেয়।
ব্যর্থতার কারণ কী?
ভারতের পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল মিডল অর্ডারের পরিকল্পনাহীন ব্যাটিং। বরুণ চক্রবর্তীর দুর্দান্ত স্পেলের পরেও ভারত ম্যাচ জিততে পারেনি, কারণ ব্যাটাররা নিজেদের দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। আগ্রাসী ব্যাটিং না করে মন্থর ব্যাটিং করে তারা চাপ আরও বাড়িয়েছে।
এখন সিরিজ ২-১ ব্যবধানে ভারতের অনুকূলে থাকলেও, এই হার দলকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে। বিশেষ করে মিডল অর্ডারের এই ব্যর্থতা সামনের ম্যাচগুলিতেও সমস্যা তৈরি করতে পারে। আগামী ম্যাচে ব্যাটিং নিয়ে বাড়তি মনোযোগ না দিলে সিরিজের রাশ ফসকে যেতে পারে সূর্যকুমারদের হাত থেকে।
ত্রিবেণী সঙ্গম থেকে পুণ্যার্থীদের সরাতে কঠোর পদক্ষেপ, ঘোড়সওয়ার পুলিশ নামাল যোগী সরকার