পরমাণু অস্ত্রের দৌড়ে নতুন করে আমেরিকার প্রবেশ
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো থামেনি, অন্যদিকে পশ্চিম এশিয়ায় ইজরায়েল এবং হামাস, হিজবুল্লা, হুথি মিলিত সংঘর্ষ পরিস্থিতিকে ক্রমশ জটিল করে তুলছে। এই আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে আমেরিকা ঘোষণা করেছে নতুন ধরনের পরমাণু বোমা পরীক্ষা করার পরিকল্পনা। নতুন এই বোমার নাম দেওয়া হয়েছে বি৬১-১৩, যা হিরোশিমায় ব্যবহৃত পরমাণু বোমার তুলনায় ২৪ গুণ বেশি শক্তিশালী বলে দাবি করা হয়েছে।
যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রয়োজনীয়তা
বিশ্ব রাজনীতিতে এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি অনেকটা ‘শীতল যুদ্ধ’-এর সময়ের স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আমেরিকা রাশিয়া ও চীনের শক্তি বৃদ্ধিকে নজরে রেখে তার পরমাণু নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। পরমাণু অস্ত্র তৈরির দিক দিয়ে রাশিয়া এখনো শীর্ষে আছে, এবং আমেরিকা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
পেন্টাগনের মতে, এই নতুন বোমা প্রয়োগের পর বিস্ফোরণস্থলের ৮০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে প্রায় ছয় লক্ষ মানুষ পলকে ধ্বংস হয়ে যাবে। এমনকি দেড় কিলোমিটারের মধ্যে সব ভবনও তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। আশেপাশের এলাকায় যারা বেঁচে থাকবেন, তারাও তেজস্ক্রিয়তার শিকার হয়ে প্রাণঘাতী রোগের সম্মুখীন হতে পারেন।
মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত ও আমেরিকার অবস্থান
ইরানের সমর্থনে হামাস যখন ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করে, তখন থেকেই আমেরিকা ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে। ভূমধ্যসাগরের দিকে আমেরিকার রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর. ফোর্ড মোতায়েন করা হয়েছে যাতে ইজরায়েলের উপর কোনও আক্রমণ প্রতিহত করা যায়। এছাড়াও লোহিত সাগরের দিকে ইউএসএস আইজেনহাওয়ার মোতায়েন করা হয়েছে হুথিদের হামলা প্রতিরোধের জন্য।
এই আঞ্চলিক সংঘাত এবং সম্ভাব্য আণবিক হুমকির কারণে ওয়াশিংটন নতুন ধরনের পরমাণু অস্ত্র তৈরির দিকে ঝুঁকছে বলে অনেকের মত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান ইতিমধ্যে পরমাণু অস্ত্র তৈরির শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে, এবং এটি ওয়াশিংটনকে চাপে ফেলছে।
আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে পরমাণু অস্ত্রের গুরুত্ব
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকা এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা জাহির করতে চায়। ২০২৩ সালে ‘নিউক্লিয়ার পশ্চার রিভিউ’ নামের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাশিয়া ও চীন গোপনে এমন অস্ত্র তৈরি করছে যা প্রয়োগ করলে আমেরিকা একেবারে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এই ভয় থেকেই আমেরিকা নতুন করে পরমাণু বোমা পরীক্ষা এবং রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৮০ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে।
ভবিষ্যৎ পরমাণু অস্ত্রের দৌড় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই সিদ্ধান্তে শুধু আমেরিকাই নয়, বরং রাশিয়া এবং চীনও নতুন করে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা শুরু করতে পারে। সম্প্রতি রাশিয়া তাদের ‘নিউক্লিয়ার টেস্ট ব্যান ট্রিটি’ থেকে বেরিয়ে গেছে। যদিও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন যে আমেরিকা নতুন করে পরীক্ষা না চালালে রাশিয়াও সেই পথে হাঁটবে না। তবে একবার এই পরীক্ষা শুরু হলে রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং চীনসহ পরমাণু শক্তিধর দেশগুলো এই দৌড়ে নামতে পারে, যা বিশ্বকে ভয়াবহ পরমাণু যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে।
নির্বাচনী কৌশল ও পরমাণু অস্ত্র প্রসঙ্গ
বিশ্ব রাজনীতির বাইরে আমেরিকার ঘরোয়া রাজনীতিতেও পরমাণু অস্ত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দল পরমাণু নীতি নিয়ে প্রচারে নেমেছে। ডেমোক্র্যাটরা বি৬১-১৩ আণবিক বোমার শক্তির কথা তুলে ধরছেন, যেখানে রিপাবলিকানরা বি৮৩-১ বোমার পরীক্ষা এবং সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছেন।
এই প্রেক্ষাপটে আমেরিকার নতুন করে পরমাণু অস্ত্রের দিকে মনোযোগ শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক হুমকির জন্য নয় বরং নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবেও দেখা যেতে পারে।