পণ্য ও পরিষেবা কর সরলীকরণের ঘোষণা!
৭৯তম স্বাধীনতা দিবসের সকালে লালকেল্লার ঐতিহাসিক প্রাচীরের সামনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীর জন্য দিলেন এক বড় সুখবর। এ বছরের দীপাবলিতে ভারতীয় কর ব্যবস্থায় আসছে বড়সড় পরিবর্তন — পণ্য ও পরিষেবা কর বা জিএসটি হতে চলেছে আরও সহজ, স্বচ্ছ এবং সাধারণ মানুষের জন্য কম বোঝাসম্পন্ন। মোদীর কথায়, “নতুন প্রজন্মের জন্য এ হবে এক বিশেষ উপহার, যা দীপাবলির আনন্দকে দ্বিগুণ করবে।”
প্রধানমন্ত্রী জানান, সংস্কারের ফলে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ—উভয়েরই করের বোঝা হালকা হবে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্র জিএসটি পরিকাঠামোতে পরিবর্তনের প্রস্তুতি শুরু করেছে, এবং জুলাই মাসেই তার ইঙ্গিত মিলেছিল। অবশেষে স্বাধীনতা দিবসের প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টার ভাষণে তিনি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করলেন— এই দীপাবলিতেই দেশ দেখবে নতুন জিএসটি কাঠামো।
মোদীর ভাষণে শুধু কর সংস্কারের বার্তাই ছিল না, বরং তা ছিল এক বিস্তৃত রূপরেখা, যেখানে উঠে এসেছে দেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং শক্তি বৃদ্ধির সংকল্প। তিনি স্পষ্টভাবে জানান, ভারত প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি ক্ষেত্রে দ্রুত স্বনির্ভরতার পথে এগোচ্ছে।
পাকিস্তান প্রসঙ্গও উঠে এল
ভাষণের এক পর্যায়ে পাকিস্তানকে পরোক্ষভাবে তির ছুঁড়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা সন্ত্রাসের পথে হাঁটে, তারা শেষমেশ নিজেরাই ধ্বংসের পথে যায়। ভারত শান্তির পক্ষে, কিন্তু প্রয়োজনে শক্তি প্রদর্শন করতেও পিছপা হবে না।” তাঁর এই মন্তব্য স্পষ্টতই প্রতিবেশী দেশের উদ্দেশেই ছিল, যা স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে নতুন নয়, তবে এবার তা ছিল আরও দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে।
পরমাণু শক্তি বৃদ্ধির বার্তা
প্রধানমন্ত্রী এদিন দেশের পরমাণু শক্তি বৃদ্ধির পরিকল্পনার কথাও স্পষ্ট করেন। তাঁর মতে, প্রযুক্তি ও গবেষণায় বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারত শুধু শক্তির চাহিদা পূরণই করবে না, বরং বিশ্ব মঞ্চে পরমাণু শক্তি সম্পন্ন এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তিধর দেশ হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করবে। একইসঙ্গে তিনি জ্বালানি ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য উৎসের ব্যবহার বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেন।
এক রেকর্ডও গড়লেন মোদী
লালকেল্লা থেকে এদিন মোদীর ১২তম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ ছিল। এর মাধ্যমে তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ছাপিয়ে গেলেন, যিনি ১১ বার এই মঞ্চ থেকে ভাষণ দিয়েছিলেন। এখন তিনি রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে, প্রথম স্থানে রয়েছেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু।
দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতি
মোদীর ভাষণে অপারেশন সিঁদুর থেকে শুরু করে অবকাঠামো উন্নয়ন, গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করা, প্রযুক্তি খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন—সবকিছুরই বিস্তারিত পরিকল্পনা উঠে আসে। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু অর্থনৈতিক উন্নতি নয়, বরং এমন এক ভারত গড়ে তোলা, যেখানে প্রতিটি নাগরিক গর্বের সঙ্গে বলতে পারে— এ আমার দেশ, এ আমার গর্ব।”
দীপাবলির আগে নতুন কর কাঠামো যে শুধু ব্যবসায়িক পরিসরেই প্রভাব ফেলবে তা নয়, বরং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও স্বস্তি আনবে—এ কথা প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন। স্বাধীনতার এই বিশেষ দিনে তাঁর বার্তা ছিল একাধারে আশা, আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তার প্রতীক।
শুল্কযুদ্ধের মাঝেই আমেরিকা সফরে মোদী? ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে

