নোবেল মনোনয়ন পেলেন ইমরান খান!
পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বর্তমানে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁসের মামলায় কারাবন্দি। তবে জেলের চার দেয়াল তাঁর প্রভাব কমাতে পারেনি। বরং এবার তিনি মনোনীত হয়েছেন ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য। তাঁর এই মনোনয়ন বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ইমরান খানের নোবেল মনোনয়ন এলো কীভাবে?
নরওয়ের পার্টিয়েট সেন্ট্রাম নামের একটি রাজনৈতিক সংগঠন ইমরান খানকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে। এই মনোনয়নের মূল উদ্যোক্তা ‘পাকিস্তান ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স’ (PWA) নামক একটি মানবাধিকার সংগঠন। তাদের মতে, ইমরান খান পাকিস্তানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে লড়াই করেছেন, তাই শান্তির নোবেলের জন্য তিনি যথাযথ ব্যক্তি।
পার্টিয়েট সেন্ট্রাম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টে জানায়—
“আমরা আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার অধিকার রয়েছে—এমন সংস্থার সঙ্গে একজোট হয়ে আমরা পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে মনোনীত করেছি।”
ইমরানের অতীত শান্তি প্রচেষ্টা
এটি প্রথমবার নয়, এর আগেও ২০১৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার জন্য ইমরান খানকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল।
২০১৯ সালের বালাকোট বিমান হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই সময় ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলট অভিনন্দন বর্তমান পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি হন। ইমরান খান কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ পরিস্থিতি না বাড়িয়ে অভিনন্দনকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয় এবং ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়।
কেন বিতর্কিত ইমরানের নোবেল মনোনয়ন?
ইমরান খানের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে এই মনোনয়ন নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
- দুর্নীতির অভিযোগ: তিনি বর্তমানে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগে কারাবন্দি।
- রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র নাকি সত্য? তাঁর সমর্থকদের দাবি, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো ষড়যন্ত্র করে তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে, যাতে তিনি রাজনীতিতে আর ফিরতে না পারেন।
- গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দাবিদার? ইমরানের সমর্থকরা বলছেন, তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন, তাই শান্তির নোবেল প্রাপ্য। কিন্তু সমালোচকরা মনে করেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি নিজেও বিরোধী কণ্ঠস্বর দমনের চেষ্টা করেছিলেন।
রাজনীতিতে ইমরানের পতন ও সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন
ইমরান খান ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু তাঁর শাসনকাল অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধে জর্জরিত ছিল।
২০২২ সালের এপ্রিল মাসে—
- বিরোধী দলগুলোর চাপ ও অনাস্থা ভোটে তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব হারান।
- এরপর তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়।
- ২০২৩-২৪ সালে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়, আর তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (PTI) ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে।
তবে তাঁর ভক্তদের আশা, এই নোবেল মনোনয়ন ইমরান খানের জন্য নতুন রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে পারে। যেমন ১৯৯২ সালে তিনি ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে জেতানোর পর ফের রাজনীতিতে ফিরে এসেছিলেন, তেমনই এই মনোনয়ন তাঁর জন্য রাজনৈতিক পুনরুত্থানের মঞ্চ তৈরি করতে পারে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
প্রেমের ইঙ্গিত না গোপন বার্তা? দেবচন্দ্রিমার ‘জিবলি’ ছবিতে রহস্যময় প্রেমিক!