নীতীশ-পুত্র নিশান্ত: রাজনীতি নয়, আধ্যাত্মিকতাই লক্ষ্য!
বিহারের রাজনৈতিক অঙ্গনে বারবারই এক প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে—জেডিইউ নেতা এবং বিহারের সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের রাজনৈতিক উত্তরসূরি কে? এই প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন তাঁর একমাত্র পুত্র নিশান্ত কুমার, যিনি বয়সে ৪৯ হলেও এখনও অবিবাহিত এবং রাজনীতির প্রতি প্রকাশ্যে কোনও আগ্রহ দেখাননি।
১৯৭৫ সালের ২০ জুলাই বিহারে জন্মগ্রহণ করেন নিশান্ত। বাবা নীতীশ কুমার এবং মা মঞ্জু সিন্হার কোলে বড় হন তিনি। মাত্র ৩২ বছর বয়সে ২০০৭ সালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় মঞ্জুর। একমাত্র সন্তান হিসেবে নিশান্তকেই তখন পরিবারকে সামলানোর দায়িত্ব নিতে হয়।
শৈশব কাটে পটনার সেন্ট ক্যারেন্স স্কুলে। পরে মুসৌরির মানব ভারতী ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি হন তিনি। স্কুলজীবন শেষ করে ঝাড়খণ্ডের বিড়লা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (বিআইটি), মেসরায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হন। শিক্ষাজীবন শেষ করেই বহুজাতিক এক সংস্থায় চাকরি পান। কিন্তু রাজনীতির প্রতি উৎসাহ? সে উত্তর বহুবার দিয়েছেন নিশান্ত—“রাজনীতি আমার ক্ষেত্র নয়; আমার প্রথম প্রেম আধ্যাত্মিকতা।”
২০১৭ সালে যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয় তিনি কি বাবার দলে যোগ দেবেন? নিশান্ত স্পষ্ট বলেন, “রাজনীতির প্রতি আমার আগ্রহ নেই। আমি আধ্যাত্মিক পথেই এগোতে চাই।” তাঁর কথায়, রাজনীতির জটিলতা এবং অস্থিরতা তাঁকে কখনও আকর্ষণ করেনি।
৪৯ বছর বয়সে এখনও অবিবাহিত নিশান্ত। পিটিআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাঁর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩.৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১.৯৮ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি এবং ১.৬৩ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে, যা তিনি মূলত তাঁর মায়ের কাছ থেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন।
যদিও তিনি রাজনীতি অপছন্দ করেন, তবুও মাঝে মাঝে জনসমক্ষে বাবার হয়ে প্রচার করতে দেখা যায় তাঁকে। এই বছরের জানুয়ারিতে বখতিয়ারপুরে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে জেডিইউ-কে সমর্থনের আবেদন করেন তিনি। সেই সময় অনেকেই মনে করেছিলেন—হয়তো নিশান্ত রাজনীতির পথে হাঁটতে চলেছেন। জুন মাসে বখতিয়ারপুরের আরেক অনুষ্ঠানে বাবার সঙ্গে তিনি আরও একবার নজর কাড়েন।
এর মধ্যেই শোনা যায়, কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সিদ্ধান্তে নাকি নিশান্তের পরোক্ষ ভূমিকা ছিল। এই খবরে রাজনৈতিক মহলে জোরদার জল্পনা ওঠে—নীতীশ কি তবে পুত্রকে ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য প্রস্তুত করছেন? এমনকি বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও কানাঘুষো চলছিল। কিন্তু এনডিএ প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হতেই বোঝা যায়—নিশান্তকে প্রার্থী করা হয়নি।
এতে আবার প্রশ্ন জোরালো হয়—নীতীশ কুমারের রাজনৈতিক উত্তরসূরি কে? দলীয় মহলে অনেকে মনে করছেন, নীতীশ অবসর নিলে তাঁর জায়গায় কোনও দক্ষ দলীয় নেতাই দায়িত্ব নেবেন। অন্যদিকে, বিজেপি শিবিরের ধারণা, নতুন সরকারের অর্ধেক পথ চলার পর মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে পরিবর্তন আসতে পারে। সেই পরিস্থিতিতে জেডিইউ-কে সঙ্গে রাখতে প্রয়োজন হলে নিশান্ত কুমারকে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সবই জল্পনা—নিশান্ত নিজে রাজনীতি নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও আগ্রহ দেখাননি।
সব মিলিয়ে, নীতীশের ছেলে Nishant Kumar এক রহস্যময় চরিত্র—ইঞ্জিনিয়ার, আধ্যাত্মিকতার পথের পথিক, রাজনীতির থেকে দূরে থাকা একজন সম্ভাব্য উত্তরসূরি, যাঁকে নিয়েই চলছে নানা জল্পনা। ভবিষ্যতে তিনি কি আদৌ রাজনীতিতে আসবেন, নাকি আধ্যাত্মিকতার পথেই এগিয়ে যাবেন—সেই উত্তর সময়ই দেবে।

