টোকিয়ো-ওসাকার ‘লভ হোটেল’!
চেরিফুলের সৌন্দর্য, নিখুঁত শহরবাস, সুশি ও প্রযুক্তিনির্ভর সংস্কৃতির জন্য খ্যাত জাপান। তবে এই সাজানো-গোছানো সমাজের অন্তরালে রয়েছে এক অন্য জগত— প্রেম, উদ্দামতা এবং গোপনীয়তা মিশিয়ে তৈরি হয়েছে যার শরীর। সেই জগতের নাম ‘লভ হোটেল’। টোকিয়ো ও ওসাকার অলিগলিতে, নিয়ন আলোয় সাজানো এই হোটেলগুলো কেবল রাত্রির আঁধারেই জেগে ওঠে, যেখানে নিষিদ্ধ প্রেমের মাদকতা মেলে বৈধ আশ্রয়।
জাপানে লভ হোটেলের ইতিহাস নতুন নয়। ষোড়শ শতাব্দীর এডো যুগ থেকেই গোপন প্রেমের খোঁজে প্রেমিক-প্রেমিকারা বেছে নিতেন অস্থায়ী আশ্রয়। সেই ‘চা-ঘর’গুলোই আধুনিক রূপ নিয়েছে নিয়ন ঝলমলে হোটেলে। তবে আধুনিক লভ হোটেলের সূচনা ১৯৬৮ সালে ওসাকায় ‘হোটেল লভ’ দিয়ে, যার নাম থেকেই ‘লভ হোটেল’ শব্দটির জন্ম।
এই হোটেলগুলির বিশেষত্ব তাদের থিমভিত্তিক ঘর। কোথাও রাজপ্রাসাদের আদলে, কোথাও ‘হ্যালো কিটি’র আদরকক্ষে। কেউ খোঁজেন সায়েন্স ফিকশন পড, কেউ বা বেছে নেন ‘জেল সেল’ ঘর। এমনকি কিছু ঘরে ঢুকলেই মনে হবে আপনি সমুদ্রের গভীরে। বিশ্রামের পাশাপাশি অনেকেই এসব ঘর দেখতে যান নিছক কৌতূহলে।
এই হোটেলগুলোর সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হল, এখানকার ঘরের সাজ। কোথাও আয়না মোড়া ছাদ ও দেওয়াল, কোথাও নিঃশব্দ দেয়াল নির্মাণ, যা ঘরের আওয়াজ বাইরে যেতে দেয় না। কামনার সঙ্গে বৈচিত্রের মেলবন্ধনে তৈরি এই রুমগুলিতে থাকে বিলাসবহুল বিছানা, প্রাপ্তবয়স্কদের টিভি, কারাওকে রুম, এমনকি স্লিপ-পার্কও।
বিশেষ ঘরে ঘরে আলমারিতে থাকে আদরপুতুল, বিভিন্ন খেলনা। অনেক হোটেলে বিনামূল্যে কন্ডোম দেওয়া হয়। এই হোটেলগুলি মূলত ঘণ্টা ভিত্তিক ভাড়ায় চলে। বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকেরা বুঝে নিতে পারেন, যেসব হোটেলে ঘন্টার ও রাতভিত্তিক ভাড়া পৃথক ভাবে লেখা, সেগুলোই এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
তবে এখানে গোপনীয়তার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। বুকিং হয় অনলাইন বা ভেন্ডিং মেশিনে। হোটেল কর্মীর সঙ্গে কোনও সরাসরি যোগাযোগের প্রয়োজন নেই। এমনকি চাইলে কেউ গাড়ি থেকেই লিফট ধরে সরাসরি রুমে ঢুকে পড়তে পারেন।
শুধু দম্পতি বা প্রেমিক যুগলেরাই যান এমনটা নয়— কেউ বিশ্রাম নিতে, কেউ বা থিমঘর দেখতে পা রাখেন এই হোটেলে। আর এই নিষিদ্ধ প্রেমের আশ্রয় এখন এক প্রকাণ্ড শিল্প। বেসরকারি হিসেবে জাপানে রয়েছে প্রায় ৩৭,০০০ লভ হোটেল, যা বছরে গড় আয় করে ৪০০ কোটি ডলারের— ভারতীয় টাকায় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ কোটি।
চোখে মুখে ঘাম জমা শহরের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা এই হোটেলগুলো যেন প্রমাণ দেয়, প্রেম ও কামনার প্রকাশ অনেক সময়েই নিয়মের গণ্ডির বাইরে গিয়েই স্বাধীনতা খোঁজে।
‘আমার জীবনের চালিকাশক্তি তুমি’ – জন্মদিনে রুক্মিণীকে আদর করে দেব দিয়েছে স্পেশাল শুভেচ্ছা

