নির্বাচনের প্রস্তুতি তুঙ্গে: বাংলায় শুরু বিশেষ সমীক্ষার প্রশিক্ষণ!
বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। একদিকে রাজনৈতিক দলগুলি যখন ভোটের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, অন্যদিকে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বুথ লেভেল অফিসার (BLO)-দের প্রশিক্ষণ শুরু করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রশিক্ষণে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (Special Intensive Revision বা SIR)-র উপর। এই প্রক্রিয়া এখন জাতীয় রাজনীতিতেও চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে।
কমিশনের তরফে BLO-দের যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে, তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, BLO-দের কাজ করতে হবে নিরপেক্ষভাবে ও একমাত্র নির্বাচন কমিশনের অধীনে। কোনো পক্ষপাতিত্ব করা চলবে না। তা করলে আইন অনুযায়ী জেল বা জরিমানার মুখে পড়তে হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও BLO-দের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন, যেন কারও নাম অনৈতিক ভাবে ভোটার তালিকা থেকে বাদ না পড়ে। প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “আপনারা রাজ্য সরকারের কর্মী। ভোটারদের অযথা হয়রানি করবেন না।”
কমিশন এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করলেও, প্রশিক্ষণের ধরন দেখে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, খুব শিগগিরই রাজ্যে SIR শুরু হতে চলেছে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালের বক্তব্য, এ ধরনের প্রশিক্ষণ আগের থেকে অনেক বেশি কার্যকর এবং বিশদ।
সম্প্রতি প্রেসিডেন্সি ডিভিশনের কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা ও নদিয়ার BLO-দের প্রশিক্ষণ কর্মশালা নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কমিশনের এক পদস্থ আধিকারিক উদাহরণ দিয়ে জানান, কিভাবে একজন IAS অফিসারের নাম একসঙ্গে চারটি জেলার ভোটার তালিকায় রয়ে গিয়েছে। এই তথ্য ভোটার তালিকা পরিষ্কার করার গুরুত্ব আরও স্পষ্ট করে।
বাড়ি-বাড়ি সমীক্ষা চালাতে হবে
BLO-দের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে— পরিবারের সদস্য সংখ্যা, কেউ মারা গিয়েছেন কি না বা অন্যত্র সরে গিয়েছেন কি না, তার প্রমাণ-সহ তথ্য নিতে হবে। প্রতিটি বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট ফর্ম দিতে হবে, পরে তা সংগ্রহ করে কমিশনে জমা দিতে হবে।
তালাবন্ধ বাড়ির ক্ষেত্রেও নিয়ম স্পষ্ট
কোনও বাড়ি তালাবন্ধ থাকলে, BLO-দের সেখানে ফর্ম ফেলে আসতে হবে এবং সেই বাড়ির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে বারবার যেতে হবে সেই বাড়িতে।
নথি কী লাগবে?
যদিও এখনও পশ্চিমবঙ্গে কোন নথি বাধ্যতামূলক হবে তা নির্দিষ্ট করে জানায়নি কমিশন, তবে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে— অনেকগুলি প্রমাণপত্রের মধ্যে যেকোনও একটি থাকলেই চলবে। আগের তালিকায় যাঁদের নাম ছিল (২০০২ সালের SIR অনুযায়ী), তাঁদের নাম নতুন তালিকায় থাকবে। বাকিদের নথিপত্র জমা দিতে হবে।
নজরি ম্যাপ তৈরির নির্দেশ
গ্রামাঞ্চলে বাড়ির নির্দিষ্ট নম্বর না থাকায়, BLO-দের ‘নজরি ম্যাপ’ তৈরি করতে হবে— মানে হল, প্রতিটি বাড়িকে চিহ্নিত করে নম্বর দিয়ে আলাদা মানচিত্র বানাতে হবে, যাতে তালিকা হালনাগাদ করা সহজ হয়।
স্থানীয় সাহায্যের আহ্বান
সমীক্ষা কার্যকরভাবে চালাতে BLO-দের বুথ এলাকার প্রবীণ বা পরিচিত মানুষদের নিয়ে একটি গোষ্ঠী তৈরি করতে বলা হয়েছে, যাঁরা জানেন এলাকার কারা মারা গেছেন বা স্থানান্তরিত হয়েছেন।
BLO অ্যাপ ব্যবহার বাধ্যতামূলক
তথ্য জমা দিতে হবে ‘BLO অ্যাপ’-এর মাধ্যমে। ফর্ম পূরণ থেকে তথ্য আপলোড— সব কিছুই হবে ডিজিটাল মাধ্যমে। প্রয়োজন হলে অ্যাপ থেকেই আধার সংযুক্তিকরণের ফর্মও পূরণ করা যাবে।
সব মিলিয়ে, নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা নির্ভুল করতে কোমর বেঁধে নামছে কমিশন ও BLO বাহিনী।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা উচিত ভারতের? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের যুক্তিতে কী আছে

