Friday, March 21, 2025

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শান্তনুর জামিন: ইডির পর সিবিআই কি এবার হেফাজতে নেবে?

Share

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শান্তনুর জামিন

প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্ট থেকে জামিন পেলেন হুগলির বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)-র দায়ের করা মামলায় শান্তনুকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের নেতৃত্বে একক বেঞ্চ শর্তসাপেক্ষে তাঁর জামিন মঞ্জুর করে। তবে ইডির মামলায় জামিন পেলেও শান্তনুকে সিবিআই আদালতে হাজির করানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা নতুন দিক খুলে দিচ্ছে এই মামলায়।

সিবিআই-এর পদক্ষেপ কি হবে?

ইডি মামলায় জামিন পাওয়ার পর মঙ্গলবারই শান্তনুকে এবং ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে সিবিআই আদালতে হাজির করানোর কথা ছিল। সিবিআই আগে থেকেই বিশেষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিল তাঁদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে। তাই মঙ্গলবার সিবিআই দু’জনকে হেফাজতে নেওয়ার পরিকল্পনা করতে পারে।

শান্তনু গ্রেফতার: দুর্নীতির সূত্রপাত

২০২৩ সালের ১০ মার্চ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিল ইডি। এই মামলার আর এক অভিযুক্ত তাপস মণ্ডলের স্বীকারোক্তি থেকেই প্রথমে কুন্তল ঘোষ এবং পরে শান্তনুর নাম উঠে আসে। তাপস জানিয়েছিলেন, শান্তনু এবং কুন্তল, দু’জনেই নিয়োগ দুর্নীতি চক্রের মূল মাথা হিসেবে কাজ করছিলেন।

ইডি তদন্তে শান্তনুর বাড়ি থেকে প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের একটি তালিকা উদ্ধার করা হয়। ওই তালিকায় রাজ্যের ১৭টি জেলার ৩৪৬ জন প্রার্থীর নাম ছিল বলে জানা গেছে। ইডি আরও জানায়, ২৬ জন প্রার্থীকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে শান্তনু ১ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। পরে সেই টাকা সাদা করার জন্য বিভিন্ন নামে অ্যাকাউন্ট খুলে কাজ চালানোর অভিযোগ ওঠে।

‘কালীঘাটের কাকু’ এবং প্রতারণার অভিযোগ

ইডি চার্জশিটে উল্লেখ করেছে যে, শান্তনু এবং তাঁর স্ত্রীর সংস্থা ‘কালীঘাটের কাকু’ সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণায় জড়িত। অভিযোগ অনুযায়ী, শান্তনুর স্ত্রীর সংস্থা থেকে ৪০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সুজয়কৃষ্ণ একটি জমি কিনেছিলেন। কিন্তু জমি না দিয়ে, সেই টাকা ফেরত না দিয়ে প্রতারণা করা হয়।

দুর্নীতির দিক আরও প্রকাশ্যে আসছে

শান্তনুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ শুধুমাত্র আর্থিক প্রতারণা নয়, বরং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এক গভীর দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরছে। যাঁরা চাকরি পাওয়ার আশায় ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে উঠে এসেছে যে, প্রার্থীদের নামের তালিকা ব্যবহার করে শান্তনু এবং তাঁর সহযোগীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন।

তদন্তে নতুন মোড়

এই মামলায় শান্তনুর জামিন ইডি-র মামলায় পাওয়া গেলেও সিবিআই-এর পক্ষ থেকে হেফাজতে নেওয়ার পরিকল্পনা বিষয়টিকে নতুন দিক দিতে পারে। সিবিআই এবার শান্তনুর সম্পত্তি এবং আর্থিক লেনদেনের উপর আরও গভীর তদন্ত চালাতে পারে।

শেষ কথা

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শান্তনুর জামিন এবং সিবিআই-এর হেফাজতে নেওয়ার পরিকল্পনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আরও এক নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। রাজ্যের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার প্রশ্ন আবারও উঠে এসেছে। শান্তনুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হলে, নিয়োগ প্রক্রিয়ার দুর্নীতির বিষয়ে আরও অনেক তথ্য সামনে আসতে পারে।

এই ঘটনা শুধু শান্তনু বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নয়, বরং গোটা সিস্টেমের দায় নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তদন্তের ভবিষ্যৎ পরিণতি কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Read more

Local News