প্রমাণ লোপাটের সাত কৌশল!
নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় একাধিক প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টার কথা উঠে এসেছে সিবিআই-এর চার্জশিটে। আদালতে জমা দেওয়া নথিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষকসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করা হয়েছিল। সেই টাকার লেনদেন লুকানোর জন্য সাতটি পদ্ধতিতে প্রমাণ ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়।
১. ডায়েরি পোড়ানোর চেষ্টা
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই জানতে পারে, অভিযুক্তদের মধ্যে একজন, যিনি নিয়মিত টাকা তুলতেন, তিনি প্রতিটি লেনদেনের হিসাব ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। কিন্তু সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের নির্দেশে সেই ডায়েরিগুলি পুড়িয়ে ফেলা হয়। যদিও কিছু ডায়েরি সিবিআই উদ্ধার করেছে, যেখানে স্পষ্টভাবে লেনদেনের তথ্য রয়েছে।
২. ঘুষের ভিডিও মুছে ফেলা
এক সাক্ষী সিবিআইকে জানান, চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছিল। পরে সুজয়কৃষ্ণ ফোন করে সেই ভিডিও মুছে ফেলার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিও মুছে ফেলা হয়।
৩. মোবাইল ফোন জলে ফেলে দেওয়া
এক সাক্ষীর দাবি, তিনি গোপনে ঘুষের টাকা দেওয়ার ভিডিও রেকর্ড করেছিলেন এবং পরে সেটি সুজয়কৃষ্ণকে দেখিয়ে হুমকি দেন। প্রতিক্রিয়ায় সুজয়কৃষ্ণ সাক্ষীর ফোন কেড়ে নিয়ে আদিগঙ্গার জলে ফেলে দেন। এমনকি নিজের দু’টি মোবাইলও জলে ফেলে দেন, যাতে কোনো তথ্য হাতের নাগালে না থাকে।
৪. হার্ডডিস্কের তথ্য লোপাট
এক সাক্ষীর দাবি, তিনি ল্যাপটপে চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা সংরক্ষণ করতেন। কিন্তু পরে ল্যাপটপ ‘ক্র্যাশ’ হয়ে যাওয়ার অজুহাতে সমস্ত তথ্য ফরম্যাট করে দেওয়া হয়। ফলে দুই হাজারেরও বেশি চাকরিপ্রার্থীর নামের রেকর্ড মুছে যায়।
৫. মোবাইলের নথি মুছে ফেলা
সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের সংস্থা ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর এক মহিলা কর্মী জানিয়েছেন, বিভিন্ন এজেন্টের পাঠানো ইমেল তিনি প্রিন্ট করে দিতেন। একদিন তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়, নিজের মোবাইল থেকে সব তথ্য মুছে ফেলতে। এমনকি সংস্থার সঙ্গে অভিযুক্তদের সংযোগের বিষয়ে মুখ খুললে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়।
৬. ইমেল অ্যাকাউন্ট বন্ধ
সিবিআই জানতে পারে, টাকা লেনদেনের নির্দেশ প্রধানত ইমেলের মাধ্যমে পাঠানো হত। তদন্ত শুরু হওয়ার পর, সুজয়কৃষ্ণ নিজের ইমেল অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেন এবং অন্যান্যদেরও একই কাজ করতে বাধ্য করেন। তবুও কিছু প্রমাণ তদন্তকারীদের হাতে এসে পৌঁছেছে।
৭. সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ রাখা
নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ অফিস। সাক্ষীদের মতে, যখন ঘুষের টাকা লেনদেন হত, তখন সুজয়কৃষ্ণ অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি বন্ধ করে দিতেন। এতে লেনদেনের কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ থাকত না।
সিবিআই-এর চার্জশিটে এই সাতটি পদ্ধতিতে প্রমাণ লোপাটের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তদন্তকারীরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছেন, যা নিয়োগ কেলেঙ্কারির মূল পরিকল্পনাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে সাহায্য করবে।
ন’মাস পর পৃথিবীতে ফিরছেন সুনীতা উইলিয়ামস! নাসা জানাল অবতরণের নির্দিষ্ট সময়

