ভারতের অপরাধজগতের এক ভয়ঙ্কর অধ্যায় নিঠারি হত্যাকাণ্ড। ২০০৬ সালে নয়ডার সেক্টর ৩৬-এ ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনা আজও মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। সম্প্রতি, পরিচালক আদিত্য নিম্বলকর এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে অবলম্বন করে নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র ‘সেক্টর ৩৬’, যা আবারও এই ঘটনা নিয়ে চর্চার জন্ম দিয়েছে।
ঘটনার সূচনা
নিঠারি গ্রামের বস্তি এলাকা থেকে একের পর এক শিশু নিখোঁজ হতে থাকে। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। একদিন একটি বাচ্চা ছেলে বল খুঁজতে গিয়ে একটি পচা হাত খুঁজে পায়। পুলিশের দাবি ছিল, কোনও পশু হাতটি এনে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নিখোঁজের সংখ্যা বাড়তে থাকায় গ্রামবাসীরা পুলিশের কাছে চাপ সৃষ্টি করে।
মর্মান্তিক আবিষ্কার
২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর সকালে নয়ডার ব্যবসায়ী মনিন্দর সিং পান্ধেরের বাংলোর পিছনে একটি নর্দমায় পাওয়া যায় মানুষের খুলি ও কঙ্কালের স্তূপ। পুলিশ তদন্তে নেমে মোট ১৭টি খুলি এবং নরকঙ্কালের সন্ধান পায়। গ্রেফতার করা হয় মনিন্দর এবং তাঁর গৃহপরিচারক সুরিন্দর কোলিকে। এরপর উঠে আসে লোমহর্ষক সব ঘটনা।
অপরাধের স্বীকারোক্তি
তদন্তে জানা যায়, সুরিন্দর বাচ্চাদের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসতেন। তাদের শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হত। সুরিন্দর আরও স্বীকার করেন, হত্যার পর তিনি মৃতদেহের সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হতেন এবং শেষে দেহাংশ রান্না করে খেয়ে ফেলতেন। বাকি কঙ্কালগুলি ফেলে দেওয়া হত বাংলোর পিছনের নর্দমায়।
নিঠারি হত্যাকাণ্ডের সামাজিক প্রভাব
এই ঘটনার পর পুরো দেশজুড়ে শোক ও ক্ষোভের স্রোত বইতে থাকে। সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে এবং চাপের মুখে মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসে পিঙ্কি নামের এক গৃহপরিচারিকার ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা। তাঁর দেহও একইভাবে নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছিল।
আদালতের রায়
গাজিয়াবাদের সিবিআই আদালত এই ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম উল্লেখ করে মনিন্দর সিং এবং সুরিন্দর কোলিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। যদিও ইলাহাবাদ হাইকোর্ট পরবর্তীতে পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে তাঁদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বাতিল করে।
ওটিটি-তে পুনর্জাগরণ
‘সেক্টর ৩৬’ সিনেমায় সুরিন্দর কোলির চরিত্রে বিক্রান্ত মাসে এবং তদন্তকারী অফিসারের ভূমিকায় দীপক ডোবরিয়াল অভিনয় করেছেন। এই সিনেমা শুধু নিঠারি হত্যাকাণ্ডকে তুলে ধরেনি, বরং প্রশাসনের দুর্নীতি ও সমাজের বিভিন্ন অন্ধকার দিকও সামনে এনেছে।
নিঠারি হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা ভারতীয় বিচারব্যবস্থা, সমাজ এবং প্রশাসনের বিভিন্ন দুর্বলতাকে উন্মোচন করে। আজও এই ঘটনা একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ হয়ে রয়েছে। ‘সেক্টর ৩৬’ সিনেমার মাধ্যমে সেই মর্মান্তিক স্মৃতি আবারও মানুষের মনে জাগ্রত হয়েছে।