Friday, March 21, 2025

নিউ টাউনের চওড়া রাস্তায় দুর্ঘটনার কারণ কি বেপরোয়া গতি?

Share

নিউ টাউনের চওড়া রাস্তায় দুর্ঘটনার কারণ!

নিউ টাউন এলাকায় একের পর এক দুর্ঘটনার খবরে শোরগোল পড়েছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা পুলিশ এবং সাধারণ মানুষের চিন্তা বাড়িয়েছে। বিধাননগর কমিশনারেটের মতে, অতিরিক্ত গতি এবং মত্ত অবস্থায় গাড়ি বা বাইক চালানোই এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার প্রধান কারণ।

দুর্ঘটনার মর্মান্তিক পরিসংখ্যান
শুক্রবার রাতে নিউ টাউনের সাপুরজি এলাকায় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী ম্যাকনেলি দাস বাইক থেকে ছিটকে পড়ে প্রাণ হারান। তিনি তাঁর দুই বন্ধুর সঙ্গে বাইকে চেপে ফিরছিলেন। উড়ালপুল থেকে নামার সময় বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনজনই ছিটকে পড়েন। ম্যাকনেলি মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে মারা যান। এ ছাড়া, গৌরাঙ্গনগর এলাকায় বাইকের ধাক্কায় ওষুধ ডেলিভারি কর্মী লক্ষ্মীনারায়ণ পাত্রের মৃত্যু হয়। এর একদিন আগে, আকাঙ্ক্ষা মোড়ে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান ট্যাংরার বাসিন্দা এক যুবক।

চওড়া রাস্তা এবং বিপজ্জনক গতি
নিউ টাউনের রাস্তাগুলো চওড়া এবং যানজটমুক্ত। এই সুবিধাকে অনেক চালক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি বা বাইক চালানোর সুযোগ হিসেবে নিচ্ছেন। পুলিশের মতে, রাতের দিকে বিশেষত এই সমস্যা আরও প্রকট হয়। রাস্তার প্রশস্ততা এবং ট্র্যাফিকের অভাব অনেক চালককে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাতে উদ্বুদ্ধ করে, যা প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে পুলিশি পদক্ষেপ
বেপরোয়া গতি রোধ করতে নিউ টাউনের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে স্পিড লিমিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। কর্মা ক্রসিং, সেন্ট জ়েভিয়ার্স, সিলিকন ভ্যালি, এবং কারিগর ভবনের মতো এলাকাগুলোতে প্রতি মাসে বিপজ্জনক গতি ও ট্র্যাফিক আইন ভাঙার কারণে জরিমানা করা হয়। পুলিশের দাবি, গত বছরের আগস্ট থেকে এই ক্যামেরাগুলি স্থাপন করার পর বেপরোয়া গতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এর পরেও অনেক চালক আইন অমান্য করছেন।

ট্র্যাফিক আইন অমান্য এবং জরিমানার সমস্যাগুলি
পুলিশের দাবি, ই-চালানের মাধ্যমে যে জরিমানা করা হয়, তা আদায়ের হার এখনও সন্তোষজনক নয়। জরিমানার গুরুত্ব না বোঝায় অনেক চালক ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে রাতের দিকে বাইক এবং গাড়িগুলো নিয়ম ভেঙে চলাচল করে। এমনকি সরকারি গাড়ি ব্যবহারকারীরাও নিয়ম মানছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিউ টাউনে দুর্ঘটনার ক্রমবর্ধমান হার
২০২৪ সালে নিউ টাউনে বাইক-সহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসেই তিনটি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই পরিসংখ্যান পরিষ্কার করে দিচ্ছে, বেপরোয়া গতি এবং আইন অমান্য করার প্রবণতা কতটা ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে।

সমাধানের পথে পুলিশ
প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা রোধ করতে বিধাননগর পুলিশ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রচারের পাশাপাশি জরিমানা আদায়ের প্রক্রিয়া আরও কঠোর করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চওড়া রাস্তার সুবিধা কাজে লাগিয়ে যারা বেপরোয়া চালায়, তাদের রুখতে কড়া পদক্ষেপের দাবি উঠছে।

নিউ টাউনের চওড়া রাস্তাগুলো মানুষের যাতায়াতকে সহজ করেছে। তবে এই সুবিধা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার না হয়, তাহলে তা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। মানুষের সচেতনতা এবং আইন মেনে চলার প্রবণতা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

পুর গর্জনই সার, ১২৭টি অবৈধ বাড়ির মধ্যে ভাঙা হয়েছে মাত্র ২৭টি!

Read more

Local News