Sunday, November 30, 2025

‘নারীবাদ যেন গালিগালাজ!’— সমাজের ভুল ধারণা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন ফাতিমা সানা শেখ

Share

সমাজের ভুল ধারণা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন ফাতিমা সানা শেখ

নারীবাদ শব্দটি শুনলেই অনেক পুরুষ অস্বস্তিতে ভোগেন— কেউ রেগে যান, কেউ আবার নারীবাদকে দেখে ভয় পান। অথচ নারীবাদের প্রকৃত অর্থই যে অধিকাংশই বোঝেন না, সেই ধারণাই এবার প্রকাশ্যে তুলে ধরলেন বলিউড অভিনেত্রী ফাতিমা সানা শেখ। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে নিজের নতুন ছবি নিয়ে কথা বলতে গিয়েই উঠে এল সমাজের গভীরে প্রোথিত এক পুরনো সমস্যা— নারীবাদকে ঘিরে পুরুষতান্ত্রিক ভুল ব্যাখ্যা।

নিজের নতুন ছবি ‘ধক ধক’ নিয়ে আলোচনার সময় ফাতিমা জানান, ছবির বেশ কিছু দৃশ্য এতটাই সূক্ষ্ম, সংবেদনশীল এবং নারীর অনুভূতিকে কেন্দ্র করে তৈরি যে প্রথমে তাঁর মনে হয়েছিল— নিশ্চয়ই কোনও মহিলা পরিচালক এই দৃশ্যগুলি নির্মাণ করেছেন। পরে জানতে পারেন, পরিচালক তরুণ দুদেজা। আর সেটাই তাঁকে অবাক করেছে সবচেয়ে বেশি। ফাতিমার কথায়, “আমি ভেবেছিলাম, এই দৃশ্য তো কোনও মহিলা পরিচালকেরই তৈরি। পরে বুঝলাম— না, একজন পুরুষই এই সব ভাবতে পারেন। উনি খুবই নারীবাদী পুরুষ। তবে এর মানে এই নয় যে উনি পুরুষবিরোধী।”

এই প্রসঙ্গে এসে নিজের ক্ষোভ আর সংযত রাখতে পারেননি অভিনেত্রী। তিনি বলেন, “পুরুষদের যদি জিজ্ঞেস করা হয়— ‘আপনি কি নারীবাদী?’ বেশিরভাগই সঙ্গে সঙ্গে চটে গিয়ে বলে, ‘না না, আমি নারীবাদী নই!’ যেন নারীবাদ শব্দটা গালিগালাজ। আসলে সমস্যা হল— এরা নারীবাদের অর্থই জানে না। ভাবে, নারীবাদী মানে পুরুষবিরোধী বা পুরুষকে হেয় করা। অথচ নারীবাদ মানে হল সমানাধিকারের দাবি, তার বেশি কিছু নয়।”

ফাতিমা মনে করেন, সমাজে মহিলাদের নিয়ে যে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি— তাতে পুরুষতন্ত্রের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। “মহিলারা মহিলাদের শত্রু”, “মহিলারা ঘ্যানঘ্যানে”— এই সব ধারণাই আসলে পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে তৈরি বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে ‘ধক ধক’–এর শুটিং করতে গিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি আরও স্পষ্ট হয়েছে। একজন পুরুষ পরিচালক যে নারীর দৃষ্টিকোণকে যতটা আন্তরিক ভাবে বুঝতে পারেন, তা তাঁকে নতুন করে ভাবিয়েছে।

এদিকে, ছবির আলোচনার মাঝেই উঠে এসেছে ব্যক্তিগত জীবনও। তমন্না ভাটিয়ার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বিজয় বর্মার সঙ্গে নাকি ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে ফাতিমার— এমন গুঞ্জন ছড়িয়েছে ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে। বিশেষত তাঁরা একসঙ্গে কাজ করছেন নতুন ছবি ‘গুস্তাখ ইশ্‌ক’–এ। তবে এই গুঞ্জনে নিজেদের তরফে কেউই মুখ খোলেননি এখনো।

অন্যদিকে, কাজের প্রসঙ্গে বিজয় কিন্তু অভিনেত্রী সম্পর্কে প্রশংসাই করেছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ফাতিমার সঙ্গে কাজ করতে আমার সত্যিই ভাল লাগে। ও খুবই সহজ-সরল, খাঁটি মানুষ। দারুণ অভিনেত্রী, আর এক্সট্রিমলি ফানি। ও সবসময় মজা করতে ভালবাসে। কিন্তু কাজে কোনও ফাঁকি নেই। প্রত্যেক দৃশ্যে নিজের ১০০ শতাংশ দেয়।”

সব মিলিয়ে বলা যায়— ছবির প্রচারে এলেও, নারীবাদ নিয়ে ফাতিমার মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, সমাজে এখনও অনেকেই নারীবাদকে ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করেন। নারীবাদ মানেই পুরুষের বিরোধিতা নয়— বরং নারী-পুরুষের সমান অধিকার, সমান সুযোগের দাবি। আর সেটা বোঝাতেই যেন ফাতিমা সামনে আনলেন নিজের অভিজ্ঞতা, ক্ষোভ ও বক্তব্য।

ফাতিমার কথাতেই যেন ফুটে ওঠে আধুনিক নারীর অবস্থান— নিজস্ব মত, নিজের পরিচয়, নিজের লড়াই। আর সেই লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতেই আছে একটাই শব্দ— নারীবাদ, যা কোনওদিনই খারাপ কথা ছিল না, আজও নয়।

Read more

Local News