Friday, February 7, 2025

নাগা সন্ন্যাসীদের রুদ্র রূপ: মহাকুম্ভে কেন এত তাণ্ডব?

Share

নাগা সন্ন্যাসীদের রুদ্র রূপ

প্রয়াগরাজে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত মহাকুম্ভ মেলা শুধু ধর্মীয় কারণে নয়, বরং নানা ধরনের সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক তৎপরতার জন্যও আলোচনায় থাকে। এবারও কিছু এমন ঘটনা ঘটল, যা পুরো মেলাকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। বিশেষত নাগা সন্ন্যাসীদের আচরণ, যারা সাধারণত শান্তিপ্রিয় এবং আধ্যাত্মিক জীবনে নিবেদিত থাকেন, এবার তাদের রুদ্র রূপ দেখে সবাই চমকে গেছেন। কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল, এবং কেন নাগা সন্ন্যাসীরা একেবারে তাণ্ডব চালালেন? চলুন, জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।

নাগা সন্ন্যাসীদের পরিচিত রুদ্র রূপ

নাগা সন্ন্যাসীদের সাধনা সাধারণত কঠিন এবং কঠোর। তারা পৃথিবীর মায়া ছেড়ে শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক সাধনায় নিযুক্ত হন। তবে তাদের সম্পর্কে সাধারণ ধারণা থাকে, তারা কিছুটা রাগী বা অত্যন্ত কঠোর প্রকৃতির হয়ে থাকেন। সহজে উত্তেজিত হন না, কিন্তু যদি তাদের আধ্যাত্মিক চেতনা বা বিশ্বাসে আঘাত আসে, তবে তাদের প্রতিক্রিয়া তীব্র হতে পারে।

এবারের মহাকুম্ভে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে অবাক করার মতো। নাগা সন্ন্যাসীরা এমন এক মুহূর্তে রেগে গেছেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। কিন্তু কেন এমন আচরণ?

কুম্ভমেলা বিরোধী প্রচারণা এবং নাগা সন্ন্যাসীদের প্রতিক্রিয়া

প্রয়াগরাজে যখন কুম্ভমেলা শুরু হয়, তখন নানা ধরনের প্রচারণা চলে— ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক এবং কখনো কখনো রাজনৈতিক বিরোধিতাও দেখা যায়। এবার, কিছু ব্যক্তি কুম্ভমেলার বিরোধিতা করতে শুরু করেন। তাদের বক্তব্য ছিল, ‘কুম্ভমেলা আসলে কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাস’। এই ধরনের পোস্টার এবং প্ল্যাকার্ড মেলায় সাঁটানো হয়েছিল এবং মাইকিংও চলছিল। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল কুম্ভমেলাকে ভ্রান্ত বা অপ্রয়োজনীয় বলে প্রচার করা।

যেহেতু কুম্ভমেলা দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আয়োজন, নাগা সন্ন্যাসীরা এ ধরনের বিরোধিতা একেবারেই মেনে নিতে পারেননি। তাই তারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এমন এক পরিস্থিতিতে, নাগা সন্ন্যাসীরা কোনোভাবেই চুপ থাকতে পারেননি। তারা দ্রুত সেই পোস্টারগুলি ছিঁড়ে ফেলে দেন এবং যারা বিরোধিতা করছিলেন, তাদের দিকে তেড়ে যান। টেবিল-চেয়ার উল্টে দিয়ে তারা ভাঙচুর শুরু করেন।

নাগা সন্ন্যাসীদের তাণ্ডবের পর

এভাবে তাণ্ডব চালানোর পর কিছু লোক নাগা সন্ন্যাসীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে। তারা ওই পোস্টারগুলো সংগ্রহ করতে শুরু করে এবং তা আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। কিন্তু নাগা সন্ন্যাসীরা তাদের থামিয়ে দেন এবং নিজেই পোস্টারগুলো সংগ্রহ করে বলেন, “এগুলি যোগী বাবাকে (মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ) দেখাবো।” এটি ইঙ্গিত দেয় যে তারা কুম্ভমেলার বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সমর্থন বা সহনশীলতা দেখাতে চান না।

এদিকে, নাগা সন্ন্যাসীদের এই তাণ্ডব দেখে অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য ছিল, ‘কুম্ভমেলা ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং বিশ্বাসের এক বড় অংশ, তাই এর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপপ্রচার করা উচিত নয়।’

নাগা সন্ন্যাসীদের রুদ্র রূপ: একটি সঙ্কটের প্রতিবাদ

এটা স্পষ্ট যে, নাগা সন্ন্যাসীরা শুধু নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি একান্ত বিশ্বস্ত নন, বরং তাদের সামনে কুম্ভমেলার মতো ঐতিহ্যগত এবং আধ্যাত্মিক উপলক্ষকে ছোট করার কোনো প্রচেষ্টা তারা সহ্য করবেন না। তাদের রুদ্র রূপ এই বাস্তবতারই প্রতিফলন। তারা এই ধরনের অপপ্রচারকে একেবারে বরদাস্ত করতে চাননি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর, অনেকেই তাদের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছেন, তবে কিছু মানুষ এর সমালোচনাও করেছেন। কেউ কেউ মনে করেন, যদিও নাগা সন্ন্যাসীরা রেগে গিয়েছেন, তাদের আচরণ একটু অতিরিক্ত ছিল। তবে, একথা সত্য যে, ধর্মীয় আস্থা এবং বিশ্বাসের প্রতি তাদের আগ্রহের কারণে তারা এমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

শেষ কথা

প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে নাগা সন্ন্যাসীদের রুদ্র রূপ এবং তাদের তাণ্ডব এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এটা প্রমাণ করে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা বিশ্বাসের প্রতি এমন বিরোধিতার বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধের স্তর কতটা তীব্র হতে পারে। কুম্ভমেলা যে শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি ভারতের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, নাগা সন্ন্যাসীরা তার প্রতি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান।

একঘেয়ে দই খেতে আর ভালো লাগছে না? বানিয়ে ফেলুন শাহি দই-ভাত, সহজ প্রণালী

Read more

Local News