নাগরিকত্ব বিতর্কে নতুন মোড়!
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর নাগরিকত্ব নিয়ে চলা দীর্ঘ বিতর্কে এবার নতুন মোড়। ইলাহাবাদ হাই কোর্টের লখনউ বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারকে চার সপ্তাহের মধ্যে একটি স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ২১ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে সেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
কী নিয়ে বিতর্ক?
২০১৯ সাল থেকে রাহুল গান্ধীর নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী অভিযোগ করেন, রাহুল গান্ধী ব্রিটিশ প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া কিছু নথিতে নিজেকে ‘ব্রিটিশ নাগরিক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে রাহুলের নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি তোলেন তিনি।
সুব্রহ্মণ্যমের দাবি, ভারতের সংবিধান দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমতি দেয় না। তাই রাহুল যদি ব্রিটিশ নাগরিক হয়ে থাকেন, তবে তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্ব বাতিল হওয়া উচিত। পরে এই অভিযোগ আদালত পর্যন্ত গড়ায়, এবং বিজেপি কর্মী বিঘ্নেশ শিশিরও এ নিয়ে মামলা দায়ের করেন।
কেন্দ্রের সময় চাওয়ার আবেদন
সোমবার আদালতে কেন্দ্রের তরফ থেকে ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল সূর্যভান পাণ্ডে জানান, নাগরিকত্ব সংক্রান্ত বিষয়টি এখনও বিবেচনাধীন রয়েছে। এই বিষয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান জানাতে কেন্দ্র আরও আট সপ্তাহ সময় চায়। তবে আদালত তা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
রাহুলের সাংসদ পদ বাতিলের দাবি
এর আগে, রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ বাতিলের দাবিতে জনস্বার্থ মামলাও দায়ের করা হয়েছিল। তবে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের লখনউ বেঞ্চ সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। পাশাপাশি, সুব্রহ্মণ্যম স্বামী দিল্লির একটি আদালতের কাছে রাহুলের পাসপোর্ট বাতিলের আবেদনও জানিয়েছিলেন।
তিনি দাবি করেছিলেন, ব্রিটিশ প্রশাসনের এক আধিকারিকের নথিতে রাহুল নিজেকে ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে পরিচিত করেছেন। যদিও কংগ্রেস বরাবরই এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং বিজেপিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযুক্ত করেছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই বিতর্ক নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে সরগরম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কংগ্রেসের দাবি, বিজেপি নির্বাচনের আগে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে। অন্যদিকে, বিজেপি বলছে, একজন সংসদ সদস্যের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
এগিয়ে আসছে ২১ এপ্রিল
আগামী ২১ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানিতে আদালত কেন্দ্রে জমা দেওয়া স্টেটাস রিপোর্ট খতিয়ে দেখবে। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে আদালত পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। নাগরিকত্ব বিতর্কের এই অধ্যায় কোন দিকে গড়ায়, তা নিয়ে এখন সবার নজর ইলাহাবাদ হাই কোর্টের দিকে।
রাজনীতির অঙ্গনে এই বিতর্ক যেমন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, তেমনই দেশের সাধারণ নাগরিকরাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন — সত্যিই কি রাহুল গান্ধীর নাগরিকত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠা উচিত, নাকি এটি নিছক রাজনৈতিক কৌশল?