Friday, May 2, 2025

নবান্ন থেকে নেতাজি ইন্ডোর—মাঠে মমতা, এবার কোন লড়াইটা বেশি কঠিন?

Share

নবান্ন থেকে নেতাজি ইন্ডোর!

ছয় মাসের ব্যবধানে দুই ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এক ব্যক্তি—মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে রক্তগরম জুনিয়র ডাক্তারদের ক্ষোভ, অন্যদিকে চাকরি হারানো হাজার হাজার ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকার আর্তি। দুই ক্ষেত্রেই ভাঙনরোধের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। প্রশ্ন উঠছে—এই দুই আন্দোলনের মধ্যে কোনটা মমতার জন্য বেশি কঠিন?

২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর, আরজি কর হাসপাতালের গণ্ডগোল তুঙ্গে। ধর্মতলায় আমরণ অনশন মঞ্চে উত্তাল জনতা। সরকারি উদ্যোগে আলোচনার একাধিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরে নবান্নে মমতা নিজে মুখোমুখি বসেন জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে। দুই ঘণ্টা দশ মিনিটের সেই বৈঠকের পরেই অনশন উঠে যায়। ক্ষোভের আগুন ধীরে ধীরে নিভে আসে। রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়া উত্তেজনাও শান্ত হয়। এই ঘটনাটি প্রমাণ করে—মমতা তখনও প্রশাসক হিসেবেই পরিস্কার বার্তা দিতে পেরেছেন।

এর ছয় মাস পর, ২০২৫ সালের ৭ এপ্রিল। এবার মঞ্চ নেতাজি ইন্ডোর। প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্তে ধাক্কা খেয়েছে শিক্ষাক্ষেত্র। হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা যখন দিশাহারা, তখন মমতা ফের সামনে। প্রশাসকের পাশাপাশি ‘দিদি’র ভূমিকাতেও। আশ্বাস দেন—“আমার জীবন থাকতে কোনও যোগ্য প্রার্থী চাকরি হারাবে না।” বলেন, কারা অযোগ্য, কেন অযোগ্য বলা হচ্ছে—সব খতিয়ে দেখবে সরকার।

এই দুই বৈঠকের তুলনা টানছেন বিরোধীরা। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস—সবার বক্তব্য, আরজি কর কাণ্ড ছিল আরও স্পর্শকাতর, আরও জটিল। কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার বলেন, ‘‘আরজি কর আন্দোলনের মতো ব্যাপক নাগরিক বিক্ষোভ আমার দেখা নেই।’’

অন্যদিকে, বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য কটাক্ষ করে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দুটোই কঠিন, কারণ তাঁর দলটাই উঠে যাওয়ার পথে।” সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সরাসরি কিছু না বললেও বলেন, ‘‘মমতার রাজত্বেই মানুষের জীবন কঠিন হয়ে উঠেছে।’’

তৃণমূল অবশ্য অন্য ছবি তুলে ধরছে। কুণাল ঘোষ বলছেন, “বিরোধী হোক বা সাধারণ মানুষ—সমস্যা যখন তীব্র হয়, তখন মুখ্যমন্ত্রী নিজে সামনে এলেই সমাধান হয়। অতীতেও হয়েছে, এবারও হবে।”

তবু শাসক দলের ভেতরেও স্বীকারোক্তি আছে—আরজি কর পরিস্থিতি ছিল অনেক বেশি কঠিন। কেন?

প্রথমত, আরজি কর আন্দোলন প্রশ্ন তুলেছিল স্বাস্থ্য দফতরের উপর—যা মমতার সরাসরি অধীনস্থ। বিপরীতে, চাকরি দুর্নীতির দায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘাড়ে, যিনি এখন জেলবন্দি। দ্বিতীয়ত, আরজি কর আন্দোলনে সাধারণ মানুষের সরব অংশগ্রহণ ছিল—যা এখনও পর্যন্ত নিয়োগ দুর্নীতিতে দেখা যায়নি।

তবে শাসকদলেরই এক প্রবীণ নেতার ব্যাখ্যা, “দুটি ঘটনাই দেখিয়েছে প্রশাসনের দুর্বলতা। ক্ষোভের রূপ আলাদা হলেও নিশানা এক—সরকার।”

গত লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর মমতার প্রশাসনিক দক্ষতার কড়া পরীক্ষা এই দুটি ঘটনা। প্রথম লড়াই তিনি জিতে নিয়েছেন—দ্বিতীয়টাও কি পারবেন সামলাতে? সময় বলবে।

পুরুষের ত্বকে ক্যানসারের ঝুঁকি ৫০% বেশি! সানস্ক্রিন মাখছেন ঠিকঠাক?

Read more

Local News