Monday, December 1, 2025

নথি না থাকলেও মিলবে নাগরিকত্ব! সিএএ নিয়ে বিজেপির নতুন বার্তা, রাজ্যে শুরু ‘সহযোগিতা শিবির’

Share

নথি না থাকলেও মিলবে নাগরিকত্ব!

সিএএ (নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন) নিয়ে দীর্ঘদিনের জল্পনার পরে অবশেষে সরাসরি ময়দানে নামল বিজেপি। উদ্বাস্তুপ্রধান এলাকাগুলিতে ‘সিএএ সহযোগিতা শিবির’ খুলে আবেদন গ্রহণ শুরু করেছে দল। এমনকি এখন দাবি করা হচ্ছে—নাগরিকত্বের আবেদন করার জন্য সব নথি না থাকলেও কোনও সমস্যা হবে না।

কিন্তু হঠাৎ এতদিন পর এই উদ্যোগ কেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে রয়েছে একাধিক রাজনৈতিক কারণ। প্রথমত, নাগরিকত্বের দাবিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের একাংশ এখনও অনিশ্চয়তায়। দ্বিতীয়ত, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, যেখানে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই ‘বাঙালি অস্মিতা’ রক্ষার নামে জনমত গঠনের চেষ্টা শুরু করেছেন। তাই পাল্টা হিসাবে বিজেপি এখন নাগরিকত্বের আশ্বাসে জোর দিতে চাইছে।

শিবিরে কী হচ্ছে?

বাগদা, বনগাঁ, হরিণঘাটা-সহ বিভিন্ন উদ্বাস্তু অধ্যুষিত এলাকায় চালু হয়েছে এই সহযোগিতা শিবির। সিএএ আবেদন ফর্ম পূরণ করা, নথিপত্র জোগাড়ে সহায়তা করা, এমনকি যাঁদের কাছে কোনও নথি নেই, তাঁদের জন্যও বিকল্প পদ্ধতির কথা বলা হচ্ছে এই শিবিরগুলিতে।

বিজেপি নেতারা বলছেন, সিএএ অনুযায়ী, যারা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর বা তার আগে ভারতে প্রবেশ করেছেন এবং পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত হয়ে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে। আবেদনকারীর কাছে যদি প্রয়োজনীয় নথি না-ও থাকে, তাহলেও তিনি আবেদন জমা দিতে পারবেন। পরবর্তীতে শুনানির সময় নথি পেশ করা যাবে। না থাকলে পুনরায় সময়ও দেওয়া হবে।

মতুয়া মহাসঙ্ঘ ও কেন্দ্রের ভূমিকা

এর আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে মতুয়া মহাসঙ্ঘ নাগরিকত্বের দাবিতে বিভিন্ন এলাকায় আবেদনপত্র সংগ্রহ করছিল। ঠাকুরনগরে ছাত্র-যুব সম্মেলনে তিনি জানান, তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আবেদনকারীদের সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে সেই কাজ এতদিন খানিকটা ধীরগতিতে চলছিল। এবার বিজেপি সরাসরি ময়দানে নেমে সেই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে চাইছে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

রাজ্যে নাগরিকত্ব ইস্যুতে দুই বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে তৃণমূল ও বিজেপি। একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বাংলাভাষী এবং উদ্বাস্তু সম্প্রদায়ের হেনস্থার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন, অন্যদিকে বিজেপি বলছে, যাঁরা আটক হচ্ছেন তাঁরা ‘বাংলাদেশি’ বা ‘রোহিঙ্গা’। তবে বাস্তবে এই বিতর্কে সবচেয়ে বেশি ভুগছেন সাধারণ উদ্বাস্তুরাই, যাঁরা নাগরিকত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন।

বিজেপির অবস্থান

রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘‘সিএএ আইন আমরা এনেছি, বাস্তবায়নের দায়িত্বও আমাদের। সারা রাজ্যে বিজেপি কর্মীরা উদ্বাস্তু সমাজকে সহায়তা করবেন।’’ সেই লক্ষ্যে দল শিবির খুলে সরাসরি নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

তৃণমূলের পাল্টা প্রচার

তৃণমূল অবশ্য এই উদ্যোগকে ‘নির্বাচনী স্টান্ট’ বলে দাবি করছে। দলটির মতে, নাগরিকত্বের নামে কেন্দ্রীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে উদ্বাস্তুদের সঙ্গে শুধু ‘ভোটের খেলা’ করে এসেছে। বাস্তবে কতজন নাগরিকত্ব পান, সেটাই দেখার বিষয় বলে মন্তব্য করেছে শাসক দল।

উপসংহার

বস্তুত, নাগরিকত্ব ইস্যুতে বিজেপি ও তৃণমূলের রাজনৈতিক লড়াই আগামী দিনে আরও তীব্র হতে চলেছে। তবে তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে উদ্বাস্তু সমাজ আশায় আছে—অন্তত কাগজ না থাকলেও এবার হয়তো নিজের দেশটাকে পাওয়া যাবে, আইনি স্বীকৃতি সহকারে।

করিশ্মার কঠিন সময়ে করিনার নীরব শক্তি: কিভাবে দিদিকে পাশে দাঁড়ালেন বেবো?

Read more

Local News