Monday, December 1, 2025

নতুন শ্রমবিধি চালু নিয়ে সংঘাতের পথে কেন্দ্র ও শ্রমিক সংগঠনগুলি

Share

সংঘাতের পথে কেন্দ্র ও শ্রমিক সংগঠনগুলি

মোদী সরকার পরিকল্পনা করেছে এ বছরের মাঝামাঝি সময়েই দেশজুড়ে নতুন শ্রমবিধি কার্যকর করার। তবে এই পদক্ষেপ নিয়ে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির মধ্যে তীব্র বিরোধ দেখা দিয়েছে। সিটু, আইএনটিইউসি, এইচএমএস-সহ ১০টি শ্রমিক সংগঠন একত্র হয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছে।

ইউনিয়নগুলির বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত শ্রমিক স্বার্থের পরিপন্থী। ইতিমধ্যে সংগঠনগুলি কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, এই বিধিগুলি কার্যকর হলে তা ধর্মঘট-সহ বড় ধরনের আন্দোলনের দিকে নিয়ে যাবে।

নতুন শ্রমবিধি: কী বদল আসছে?

মোদী সরকারের নতুন শ্রমবিধি মূলত চারটি বিভাগে বিভক্ত:

  1. মজুরি সংক্রান্ত বিধি (২০১৯-এ সংসদে পাশ হয়)।
  2. শিল্প সম্পর্ক সংক্রান্ত বিধি (২০২০)।
  3. সামাজিক সুরক্ষা বিধি (২০২০)।
  4. কর্মস্থলের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য বিধি (২০২০)।

এই বিধিগুলি পুরনো শ্রম আইনগুলিকে একত্রিত করে তৈরি। তবে এর অনেক ধারাই শ্রমিকদের স্বার্থের পরিপন্থী বলে মনে করছেন শ্রমিক সংগঠনগুলি।

শ্রমিক

ইউনিয়নগুলির বিরোধিতার কারণ

১. কর্মীদের সুরক্ষার অভাব:
আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, নতুন বিধিতে কারখানা বন্ধ করার জন্য সরকারের অনুমতি লাগবে না যদি কর্মীর সংখ্যা ৩০০-র কম হয়। এর ফলে মালিকপক্ষ সহজেই ছাঁটাই করতে পারবে।

২. অতিরিক্ত কাজের চাপ:
বিধি অনুযায়ী, দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করার অধিকার হারাতে পারেন শ্রমিকেরা। এতে শ্রমিকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা এবং জীবনযাত্রার মানের ওপর প্রভাব পড়বে।

৩. নতুন ইউনিয়ন তৈরির জটিলতা:
বিধি কার্যকর হলে নতুন শ্রমিক ইউনিয়ন নথিভুক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন এআইইউটিইউসি-র সহ-সভাপতি দিলীপ ভট্টাচার্য।

৪. আলোচনা ছাড়াই পাশ:
আইএনটিইউসি-র সহ-সভাপতি অশোক সিংহ অভিযোগ করেছেন, করোনাকালে সংসদে যথাযথ আলোচনা ছাড়াই এই বিলগুলি পাশ করানো হয়। ট্রেড ইউনিয়নগুলির সঙ্গে কোনো আলোচনাও হয়নি।

রাজ্যগুলির অবস্থান

শ্রম কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়। তাই নতুন শ্রমবিধি কার্যকর করতে হলে রাজ্যের অনুমতি প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, কর্নাটক, এবং তামিলনাড়ু-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্য ইতিমধ্যেই স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা এই বিধিগুলি কার্যকর করবে না।

পশ্চিমবঙ্গের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি দিয়ে কেন্দ্রকে জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যে এই বিধি কার্যকর হবে না।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর অনুযায়ী, যেসব রাজ্য নতুন বিধি কার্যকর করবে না, সেখানেও কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে এই বিধি প্রয়োগ হবে।

শ্রমিক আন্দোলনের সম্ভাবনা

সিটু-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বলেছেন, “এই বিধিগুলির একাধিক ধারা শ্রমিক স্বার্থের পরিপন্থী। কেন্দ্র জোর করে চালু করতে চাইলে ধর্মঘট-সহ দেশজুড়ে আন্দোলন হবে।”

শ্রমিক সংগঠনগুলি ইতিমধ্যেই সংগঠিত হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। তারা দাবি করেছে, আলোচনার মাধ্যমে এই বিধিগুলিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে হবে।

কেন্দ্রের জোর তৎপরতা

কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে তিনবার চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, মার্চ মাসের মধ্যেই নতুন বিধির নিয়ম তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তবে বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিরোধিতা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার নতুন শ্রমবিধি কার্যকর করার পরিকল্পনায় অনড়।

সামনের পথ

শ্রমিক স্বার্থ বনাম সরকারি সিদ্ধান্তের এই সংঘাত কি শ্রমিক আন্দোলনে রূপ নেবে? কেন্দ্র ও শ্রমিক সংগঠনগুলির মধ্যে এই বিবাদ সমাধানের উপায় নিয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো দিশা নেই।

তবে শ্রমিক সংগঠনগুলির হুঁশিয়ারি এবং রাজ্যগুলির বিরোধিতা কেন্দ্রের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রমিকদের স্বার্থ এবং সরকারি উদ্যোগের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য তৈরি করাই হবে এই সংকট কাটানোর প্রধান চাবিকাঠি।

‘ইচ্ছে ছিল মধ্যরাতে মেয়ের ছবি দেব’, কৃষভিকে প্রকাশ্যে আনলেন কাঞ্চন-শ্রীময়ী

Read more

Local News