Thursday, January 30, 2025

নজরে ২০২৬: সরাসরি নাগরিক পরিষেবায় সক্রিয় মমতার প্রশাসন

Share

সরাসরি নাগরিক পরিষেবায়

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামো ও নাগরিক পরিষেবাগুলিকে আরও সক্রিয় করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয়লাভের পর তিনি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিজের সক্রিয়তা অনেকটা বাড়িয়েছেন। মমতার নেতৃত্বে সরকার এখন এমন দফতরগুলিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, যেগুলি সরাসরি নাগরিক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। এই উদ্যোগের লক্ষ্য জনসংযোগ বাড়িয়ে সরকার এবং জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন আরও মজবুত করা।

প্রশাসনিক অগ্রগতির পর্যালোচনায় নিয়মিত বৈঠক

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন প্রতি সোমবার নিয়মিত প্রশাসনিক বৈঠক করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি পূর্ত, জনস্বাস্থ্য কারিগরি, পুর ও নগরোন্নয়ন, কৃষি, পঞ্চায়েত এবং সেচ দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরের কাজের অগ্রগতির বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই দফতরগুলির প্রত্যেকটি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। রাস্তা নির্মাণ, জল সরবরাহ, কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়ন, গ্রামীণ আর্থসামাজিক উন্নয়ন—এসব কাজের তদারকিতে মমতার সক্রিয়তা প্রমাণ করছে যে তিনি জনমুখী প্রশাসনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।

‘বিশেষ নজর’ পরিবহণ ও স্বাস্থ্য দফতরে

পরিবহণ এবং স্বাস্থ্য দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও মুখ্যমন্ত্রীর তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পরিবহণ দফতরের কাজ নিয়মিত পর্যালোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। স্বাস্থ্য দফতরের বিষয়েও মমতা সচেতন। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ সংক্রান্ত বিতর্কের পরে স্বাস্থ্য পরিষেবার মানোন্নয়নে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সমস্ত সরকারি হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেছেন তিনি। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের শুরুতেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একাধিক নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

অভ্যন্তরীণ সমালোচনা ও পরিকল্পনা

তৃণমূলের অন্দরে কিছু নেতা-নেত্রীর ধারণা, উন্নয়ন প্রকল্পের থেকেও সাধারণ মানুষ বাস্তব কাজের অগ্রগতি দেখতে চান। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা প্রশাসনিক কাজে শৃঙ্খলা আনার উপর জোর দিয়েছেন। এর ফলে মন্ত্রিসভা এবং দফতরগুলিতে রদবদলের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ২০২৬ সালের ভোটে মমতাকে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ মোকাবিলা করতে হবে। এজন্যই প্রশাসনিক সক্রিয়তা বাড়ানোর পাশাপাশি তিনি নিজের নেতৃত্বেও পরিবর্তন আনছেন।

রাজনৈতিক কৌশলের পুনরাবৃত্তি

অনেকেই মমতার বর্তমান তৎপরতাকে ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে নেওয়া প্রস্তুতির সঙ্গে তুলনা করছেন। সেবার তিনি জেলা কমিটিগুলির সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করতেন এবং প্রশাসনিক কাজের অগ্রগতি নিজেই পর্যবেক্ষণ করতেন। তবে এবার তিনি আরও আগে থেকেই পরিকল্পনা শুরু করেছেন। আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি প্রশাসন এবং দলকে একযোগে সক্রিয় করছেন।

‘মিশন ২০২৬’-এর বার্তা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি কালীঘাটে তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক ডেকেছিলেন। সেখানেও তাঁর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আভাস পাওয়া গিয়েছে। বিধানসভায় অধিবেশন শেষে প্রশাসনিক বৈঠকে যে তৎপরতা তিনি দেখিয়েছেন, তা থেকে স্পষ্ট, তিনি আগামী নির্বাচনের আগে দল এবং সরকারকে প্রস্তুত করার রূপরেখা ঠিক করে ফেলেছেন। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী বলেছেন, “মমতা সময়ের চেয়ে এগিয়ে ভাবেন। ২০২৬ সালের নির্বাচনে কীভাবে দল এবং প্রশাসনকে প্রস্তুত করা হবে, তার নীল নকশা ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে।”

ভবিষ্যতের পথে প্রস্তুতি

মমতার নেতৃত্বে সরকার এবং তৃণমূল কংগ্রেস এখনই ২০২৬ সালের ভোটকে মাথায় রেখে কাজ শুরু করেছে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তিনি যে সক্রিয়তা দেখাচ্ছেন, তা জনমুখী উন্নয়নের বার্তা দিচ্ছে। নাগরিক পরিষেবার মানোন্নয়ন এবং সরকারের কাজের গতি বাড়ানোর মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন—২০২৬ সালের নির্বাচনের জন্য তাঁর প্রস্তুতি আগেভাগেই সম্পূর্ণ।

Read more

Local News