Monday, December 1, 2025

ধর্ষণ মামলার তদন্ত নিয়ে দুই জুনিয়র ডাক্তার সংগঠনের মধ্যে তীব্র বিরোধ

Share

দুই জুনিয়র ডাক্তার সংগঠনের মধ্যে তীব্র বিরোধ

কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে নিয়ে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দুই জুনিয়র ডাক্তার সংগঠন। সোমবার, জুনিয়র ডক্টর্‌স ফ্রন্টের নেতা কিঞ্জল নন্দ এই ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিয়ে মন্তব্য করেন, “কে ফাঁসাল, কেন ফাঁসাল, এর উদ্দেশ্য কী?” কিঞ্জলের এই প্রশ্নের রেশ ধরে নবগঠিত জুনিয়র ডক্টর্‌স অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউবিজেডিএ) তার বিরোধিতা করে অভিযোগ করেছে, কিঞ্জল ও তার সংগঠন অভিযুক্তের সুরে সুর মিলিয়ে ধর্ষণের পক্ষ নিচ্ছে।

কিঞ্জলের মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক ও পাল্টা অভিযোগ

জুনিয়র ডক্টর্‌স ফ্রন্টের নেতা কিঞ্জল নন্দ সিবিআই তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি দাবি করেন, সিবিআই কেন এতদিনে পুরো বিষয়টি খোলসা করতে পারেনি, এবং কেন আরও কেউ গ্রেফতার হয়নি। কিঞ্জলের মতে, এমন নারকীয় অপরাধ কোনো এক ব্যক্তির পক্ষে এককভাবে করা সম্ভব নয়। তদন্তে আরও দোষী ব্যক্তির সম্পৃক্ততা থাকতে পারে, এবং সিবিআইকে এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কিঞ্জল বলেন, “আমরা প্রতিটি প্রমাণের সঠিক বিচার চাই, এবং বিষয়টি যাতে চাপা না পড়ে, সেই দাবিই তুলছি।”

অন্যদিকে, কিঞ্জলের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ডব্লিউবিজেডিএ নেতা অতনু বিশ্বাস সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তায় কিঞ্জল ও তার সংগঠনের কড়া সমালোচনা করেন। অতনুর মতে, কিঞ্জল ও তার দল এমন একজনের পক্ষে কথা বলছেন, যিনি ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত। অতনু সরাসরি প্রশ্ন করেন, “কীভাবে একজন নির্যাতিতার পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে ধর্ষকের পক্ষ নেওয়া হয়? এটা কি পরোক্ষভাবে ধর্ষণকে সমর্থন করা নয়?” ডব্লিউবিজেডিএ-এর এই বার্তার ফলে দুই সংগঠনের মধ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

সিবিআই তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ও স্থানীয় রাজনীতি

প্রসঙ্গত, সোমবার শিয়ালদহ আদালতে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে পেশ করা হয়। সেখান থেকে প্রিজ়ন ভ্যানে ওঠার সময় অভিযুক্ত চিৎকার করে দাবি করেন, “সরকার ও ডিপার্টমেন্ট আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।” কিঞ্জল এই বক্তব্যকে সামনে এনে বলেন, “এমনকি নির্যাতিতার পরিবারের পক্ষ থেকেও সিবিআই তদন্তের দাবি জানানো হয়েছিল। তবে অভিযুক্ত যখন দাবি করছে যে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে, সেক্ষেত্রে পুরো বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে তদন্ত করা উচিত।”

ডব্লিউবিজেডিএ দাবি করছে যে, এই ধরনের বক্তব্য কেবলমাত্র অভিযুক্তের পক্ষ নেওয়ারই সামিল। তারা এটিও বলে যে, সিবিআই তদন্তে নির্দিষ্ট ভাবে অভিযুক্তকেই একমাত্র দোষী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর পরেও কেন কিঞ্জল ও তার সংগঠন অভিযুক্তের সুরে কথা বলছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তারা।

ব্যক্তিগত আক্রমণ ও রাজনৈতিক প্রভাব

এই ঘটনার পর, ডব্লিউবিজেডিএ কিঞ্জলের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও আক্রমণ শানায়। তারা দাবি করে যে, কিঞ্জলের শ্বশুরের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে। ফলে এমন একজনের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা কিঞ্জল কীভাবে ধর্ষণের পক্ষ নিতে পারেন, সে নিয়েও কটাক্ষ করে।

বিরোধী দলের নেতারাও এই ঘটনায় নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব এই ঘটনায় সিবিআইয়ের উপর আস্থা রাখতে বললেও তৃণমূলের নেতা বিষয়টিকে রাজনৈতিক রঙ লাগানোর অভিযোগ তুলে বলে যে, “আইন ও সংবিধান অনুযায়ী তদন্ত চলছে, এবং প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন হবেই।”

বিচারপ্রক্রিয়ার অগ্রগতি ও ভবিষ্যতের অপেক্ষা

সোমবার দুপুরে শিয়ালদহ আদালতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এর ফলে আগামী ১১ নভেম্বর থেকে মামলার বিচার শুরু হবে, এবং শুনানি চলবে প্রতিদিন। এই বিচারপ্রক্রিয়া ঘিরে সমাজের বিভিন্ন অংশ যেমন অধীর আগ্রহে রয়েছে, তেমনই দুই জুনিয়র ডাক্তার সংগঠনের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এই ঘটনার মাধ্যমে চিকিৎসা পরিসরে একটি নতুন দ্বন্দ্বের জন্ম হলো। সমাজের একাংশ যেমন নিরপেক্ষ বিচার চায়, তেমনই দুই সংগঠনের এই দ্বন্দ্ব তাদের ঐক্যকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে।

Read more

Local News