আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে কোটি টাকার খেলোয়াড় নিকোলাস পুরান!
আবারও প্রশ্নের মুখে জাতীয় দায়িত্ব বনাম লোভনীয় টি-টোয়েন্টি লিগের দ্বন্দ্ব। আর এবার এই বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিস্ফোরক ব্যাটার নিকোলাস পুরান। আচমকাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা করে জানিয়ে দিলেন—এবার থেকে শুধুই বিভিন্ন দেশে টি-টোয়েন্টি লিগ খেলবেন তিনি। আইপিএলের মতো লিগের মোহে জাতীয় দলের জার্সি খুলে রেখে দিলেন এক বিশিষ্ট ক্রিকেটার।
সামাজিক মাধ্যমে নিজের এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে পুরান লেখেন, “অনেক ভাবনার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মেরুন জার্সি গায়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া, দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা—এই অভিজ্ঞতা আমার জীবনের সেরা অধ্যায়। আমি গর্বিত যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে পেরেছি, অধিনায়কত্ব করতে পেরেছি।”
পুরান তাঁর সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি। লিখেছেন, “ভক্তদের ভালোবাসা আমার পাথেয়। কঠিন সময়ে তারাই আমাকে এগিয়ে যেতে সাহস জুগিয়েছে। আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সতীর্থদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তোমাদের বিশ্বাসই আমাকে পথ দেখিয়েছে।”
২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল পুরানের। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে শেষ বার দেশের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। আট বছরের কেরিয়ারে ৬১টি একদিনের ম্যাচে ১৯৮৩ রান এবং ১০৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২২৭৫ রান করেছেন। এই দুই ফরম্যাটে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে তিনটি শতরান এবং ২৪টি অর্ধশতরান। টেস্ট খেলেননি কখনও। ২৩টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তিনি নেতৃত্বও দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে।
তবে পুরানের আইপিএল-যাত্রা আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের থেকেও বেশি আলোচিত। ২০২৫ আইপিএলের আগে তাঁকে ২১ কোটি টাকায় ধরে রেখেছিল লখনউ সুপার জায়ান্টস। সেই আস্থার মর্যাদা দিয়ে এ বার তিনি ১৪টি ম্যাচে ৫২৪ রান করেন ৪৩.৬৭ গড় এবং ১৯৬.২৫ স্ট্রাইক রেটে। সর্বোচ্চ ছক্কার মালিকও তিনিই (৪০টি)। তাঁর ধারাবাহিক ব্যাটিং পারফরম্যান্সে এক সময় কমলা টুপির দৌড়ে শীর্ষে ছিলেন তিনি।
পুরানের এই সিদ্ধান্ত শুধুই ব্যক্তিগত নয়, বরং বর্তমান ক্রিকেট বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে তোলে। ক্রমেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তুলনায় মোহময় লিগ সংস্করণ বেশি আর্থিক নিশ্চয়তা ও জনপ্রিয়তা এনে দিচ্ছে খেলোয়াড়দের। স্টোইনিস, ম্যাক্সওয়েল, গেইল, নারাইন—সবাই একের পর এক দেশের হয়ে খেলার বদলে লিগকেই বেছে নিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ক্ষেত্রে তো এই ঘটনা আরও বেশি পরিচিত। বোর্ডের সঙ্গে বারবার মতবিরোধ, অপ্রতুল পারিশ্রমিক—সব মিলিয়ে দেশের হয়ে খেলাটা যেন ক্রমেই হয়ে উঠছে বিরল।
পুরান হয়তো তাঁর নিজের সিদ্ধান্তে শান্ত, তবে এই ঘটনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা বড় প্রশ্নচিহ্ন ছুঁড়ে দেয়। যখন কোটি কোটি টাকা ও স্বাধীনতা একদিকে আর জাতীয় দায়িত্ব অন্যদিকে—তখন অনেকেই বেছে নিচ্ছেন কেবল ছক্কার উৎসব, লিগের মুক্ত পরিসর।
৪০ বছর পরে ফের এক ভারতীয় মহাকাশে! শুভাংশুকে নিয়ে উৎক্ষেপণের প্রস্তুতিতে তুঙ্গে ‘ড্রাগন

