দুবাইয়ের আকাশে তেজসের মর্মান্তিক পতন!
দুবাই এয়ার শো ২০২৫–এ শুক্রবার ঘটল এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত যুদ্ধবিমান তেজস আচমকাই আকাশ থেকে ভেঙে পড়ল। প্রাণ গেল বিমানচালক উইং কমান্ডার নমনশ স্যায়াল-এর। ঘটনাটির পর থেকেই প্রশ্ন উঠছে—ঠিক কী হয়েছিল শেষ কয়েক সেকেন্ডে? কোন ভুল বা ত্রুটি এই দুর্ঘটনার কারণ?
শুক্রবার দুবাইয়ের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৮ মিনিটের সময় আচমকাই তেজস দ্রুত নীচে নামতে শুরু করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তা মাটিতে আছড়ে পড়ে এবং মুহূর্তে আগুন ধরে যায়। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারপাশের আকাশ। ভারতীয় বায়ুসেনা ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাইলটের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে। তবে সরকারি ভাবে দুর্ঘটনার কারণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
‘ব্যারেল রোল’ কৌশলে কোথায় গড়বড়?
যে ভিডিয়োটি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, তা বিশ্লেষণ করে বহু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন—পাইলট আকাশে ‘ব্যারেল রোল’ নামে একটি কৌশল দেখাতে গিয়েছিলেন। এই কৌশলে যুদ্ধবিমানটি একবার সম্পূর্ণ উল্টে গিয়ে আবার সোজা হয়, এবং ঘূর্ণায়মান পথে অগ্রসর হয়। এটি তেমন কঠিন কৌশল নয়, তবে পাইলটকে সাময়িকভাবে মাথা নিচে এবং পা উপরে অবস্থান করে বিমান নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
তেজস শুক্রবার আকাশে প্রথমে যথেষ্ট উচ্চতায় উঠে যায়। তারপর উল্টে যাওয়ার সময়ই সমস্যার সূত্রপাত। ভিডিয়োতে দেখা যায়—উল্টোনোর পর বিমানটি সোজা হওয়ার বদলে তীব্র গতিতে নিচের দিকে পড়তে শুরু করে। অনুমান করা হচ্ছে, তখন হয়:
- বিমান মাটির খুব কাছে নেমে গিয়েছিল, ফলে সোজা হয়ে ওঠার পর্যাপ্ত সময় ছিল না
- গতি কমে গেলে ব্যারেল রোল কৌশল সফল হয় না
- শেষ মুহূর্তে ইঞ্জিনে আগুন ধরে গিয়েছিল—এতে লিফট পাওয়ার নষ্ট হয়
বিশেষজ্ঞদের একাংশ ইঞ্জিন বিকল হওয়াকেই দায়ী করছেন। উল্লেখ্য, তেজসের ইঞ্জিনটি আমেরিকার জেনারেল ইলেকট্রিক সংস্থার তৈরি।
পূর্বের বিতর্ক—‘জল’ না ‘জ্বালানি লিক’?
দুর্ঘটনার আগের দিনই সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায় তেজসের গা বেয়ে কোনও তরল পদার্থ ঝরছে। রটতে শুরু করে—তেজস থেকে নাকি জ্বালানি লিক করছে!
ভারত সরকারের পিআইবি বিষয়টি ভুয়ো বলে জানায়। তারা বলে—ওটি জ্বালানি নয়, শুধু জল, এবং এটি একটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়ার অংশ।
দুর্ঘটনা হওয়ার পর সেই আলোচনাই নতুন মাত্রা পেয়েছে—যদিও এখনও কোনও সরকারি মন্তব্য নেই।
তেজসের ইতিহাস—২৪ বছরে কেবল দু’টি দুর্ঘটনা
তেজস ভারতীয় প্রযুক্তির সাফল্যের প্রতীক। আত্মনির্ভর ভারতের সামরিক ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এর ব্যর্থতার হার অত্যন্ত কম। ২৪ বছরের বিমানের জীবনে এ নিয়ে মাত্র দ্বিতীয় দুর্ঘটনা।
শেষ প্রশ্ন—ঠিক কী ভুল হয়েছিল?
দুবাই দুর্ঘটনাটি কি—
- কৌশলগত ভুল?
- ইঞ্জিনের ত্রুটি?
- পর্যাপ্ত উচ্চতার অভাব?
- না কি কোনও হঠাৎ যান্ত্রিক সমস্যা?
এখনও এর কোনও নিশ্চিত উত্তর মেলেনি। ভারতীয় বায়ুসেনা এবং দুবাই এয়ার শো কমিটি যৌথভাবে তদন্ত করছে।
উইং কমান্ডার নমনশ স্যায়ালের মৃত্যু দেশের বিমান বাহিনীর অপূরণীয় ক্ষতি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশবাসী অপেক্ষায়—দুবাইয়ের আকাশে তেজস ভেঙে পড়ার পেছনে কোন ভুল কাজ করল?

