Saturday, February 8, 2025

দিল্লির সরাই কালে খাঁ চকের নাম পরিবর্তন: বিরসা মুন্ডা চকের নামে নতুন যাত্রা

Share

দিল্লির বিরসা মুন্ডা চকের নাম পরিবর্তন

ভারতের ঐতিহাসিক স্থান ও রাস্তাগুলির নাম পরিবর্তনের ধারা বেশ কয়েক বছর ধরে চলমান। বিশেষ করে ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন স্থানের ঐতিহাসিক বা সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে পুনরায় নামকরণ করা হচ্ছে। এই ধারা বজায় রেখে দিল্লির সরাই কালে খাঁ চকের নামকরণ করা হয়েছে আদিবাসী নেতা বিরসা মুন্ডার নামে। সরাই কালে খাঁ চক, যেটি আন্তঃরাজ্য বাস টার্মিনালের কাছেই অবস্থিত, এখন থেকে পরিচিত হবে “বিরসা মুন্ডা চক” নামে।

বিরসা মুন্ডার স্মরণে নাম পরিবর্তন

এই নামকরণের মূল উদ্দেশ্য হলো ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন স্তরের মহান ব্যক্তিত্বদের স্মরণ করা এবং তাঁদের সংগ্রাম ও আদর্শকে সম্মান জানানো। বিরসা মুন্ডা ছিলেন একজন প্রভাবশালী আদিবাসী নেতা, যিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন এবং ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। তাঁর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভারত জুড়ে “জনজাতীয় গৌরব দিবস” পালিত হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর এক অনুষ্ঠানে সরাই কালে খাঁ চকের নাম পরিবর্তন করে বিরসা মুন্ডা চক ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “এই নতুন নাম শুধু দিল্লিবাসীর জন্য নয়, বিরসা মুন্ডার সংগ্রাম ও মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবেও কাজ করবে।” এই ঘোষণা দিল্লিতে উপস্থিত প্রতিটি ব্যক্তিকে তাঁর সংগ্রামী জীবনের অনুপ্রেরণা দেবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়াও কিছুদিন আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সরাই কালে খাঁ চকে বিরসা মুন্ডার মূর্তি উদ্বোধন করেছিলেন।

নাম পরিবর্তনের পেছনের কারণ এবং বিতর্ক

বিগত দশকগুলোতে ভারতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান এবং রাস্তার নাম পরিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক দেখা গেছে। আওরঙ্গজেব রোডের নাম পরিবর্তন করে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের নামে রাখা হয়েছিল। এই পরিবর্তনের সময়ে একাধিক ইতিহাসবিদ আপত্তি জানিয়েছিলেন, তাঁরা মনে করেন, এভাবে ঐতিহাসিক নাম পরিবর্তন ইতিহাসকে বিকৃত করার সামিল। তাছাড়া, রাজপথের নাম পরিবর্তন করে কর্তব্যপথ নামকরণের সিদ্ধান্তও ইতিহাসবিদদের মাঝে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল।

যদিও কেন্দ্রীয় সরকার এসব নাম পরিবর্তনের পেছনে উন্নত মূল্যবোধ এবং জাতীয় পরিচয়ের পুনর্নির্মাণকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং আদর্শগুলিকে আরও বেশি করে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে বলে সরকার মনে করছে। উদাহরণস্বরূপ, ইলাহাবাদ শহরের নাম পরিবর্তন করে প্রয়াগরাজ রাখা হয়েছে এবং ফৈজাবাদ স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে অযোধ্যা ক্যান্টনমেন্ট করা হয়েছে।

বিরোধিতা এবং সমর্থন

নাম পরিবর্তনের এই ধারাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ইতিহাসবিদ, সাংস্কৃতিক বিশ্লেষক এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে মনে করেন, বারবার নাম পরিবর্তন ইতিহাসকে পুনর্লিখনের সমান। তাদের মতে, নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হলেও তা একইসঙ্গে ইতিহাসের বহুমাত্রিক দিকগুলিকে অস্পষ্ট করতে পারে। আবার অনেকেই মনে করেন, এসব পরিবর্তন ভারতের আদিবাসী এবং সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অবদানকে সম্মান জানানোর একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

সারা দেশে নাম পরিবর্তনের নজির

নাম পরিবর্তনের এই ধারা দিল্লি ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন স্থানে দেখা গিয়েছে। মুঘলসরাই জংশনের নাম পরিবর্তন করে পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় জংশন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সড়ক, রেস কোর্স রোডের নাম পরিবর্তন করে “লোক কল্যাণ মার্গ” রাখা হয়েছে। স্থানীয় জনজীবনের সঙ্গে যুক্ত এসব নাম পরিবর্তনের ফলে অনেক সময় জনসাধারণের কাছে অচেনা মনে হলেও, সরকারের ধারণা এই পরিবর্তনের মাধ্যমে ভারতের সংস্কৃতি এবং ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে আরও জীবন্ত করা সম্ভব।

দিল্লির সরাই কালে খাঁ চকের নতুন নাম বিরসা মুন্ডা চক হিসেবে স্থাপন করে ভারত সরকার বিরসা মুন্ডার অবদানকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। ভারতীয় ইতিহাসে তিনি এক অসামান্য চরিত্র যিনি আদিবাসী অধিকার এবং স্বরাজের পক্ষে সংগ্রাম করেছেন। এই নামকরণের মাধ্যমে দিল্লিবাসী এবং ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মানুষ তাঁদের স্মৃতিতে বিরসা মুন্ডার আদর্শ এবং সংগ্রামকে লালন করবে।

Read more

Local News