দিল্লির ভোটযুদ্ধে বঙ্গ বিজেপির অগ্রগতি
দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে যতটা ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে, তার প্রভাব এবার সুস্পষ্ট পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির অন্দরমহলেও। রাজধানীর অলিগলিতে ভোটপ্রচারে দেখা গেল একাধিক বঙ্গ বিজেপি নেতাকে। দলের ‘মিশন দিল্লি’ সফল করতে মাঠে নামলেন সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীসহ একাধিক সাংসদ ও বিধায়ক।
বাঙালি ভোটারদের গুরুত্ব কেন?
দিল্লির ভোটে পূর্বাঞ্চলীয় ভোটারদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিহার, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে স্থানান্তরিত বহু মানুষ দিল্লির বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার হিসেবে রয়েছেন। এমনকি, কিছু এলাকায় এই ভোটারদের সংখ্যা ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে, বিজেপি, কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি (আপ)—সকলেই পূর্বাঞ্চলীয় জনগোষ্ঠীর সমর্থন পাওয়ার জন্য মরিয়া। তবে বাঙালি ভোট টানতে বিশেষভাবে সক্রিয় বিজেপি।
দিল্লিতে বঙ্গ বিজেপির প্রচারের ছাপ
বিজেপির প্রচারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এছাড়াও, জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়, পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতো ও আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালও রয়েছেন প্রচারে।
সুকান্ত মজুমদার টানা পাঁচ দিন দিল্লিতে প্রচার চালিয়েছেন, তার মধ্যে করোল বাগ ও ত্রিলোকপুরী বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই দুই কেন্দ্রেই বাঙালি ভোটারদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। শেষ দিনে তিনি ছিলেন কালকাজি বিধানসভা কেন্দ্রে, যেখানে দিল্লির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ রমেশ বিধুড়ী।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তুলে ভোট টানার চেষ্টা
বিজেপির প্রচারের অন্যতম কৌশল ছিল বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। ভোটারদের উদ্দেশে সুকান্ত বলেছেন—
“বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখুন! পশ্চিমবঙ্গে বাঙালির কী অবস্থা হচ্ছে দেখুন! এখনই সতর্ক না হলে আপনাদের জন্যও বিপদ অপেক্ষা করছে।”
এই বক্তব্যে তিনি পশ্চিমবঙ্গের ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন, যা দিল্লির অভিবাসী বাঙালিদের মধ্যে সাড়া ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
দুর্গানামের আহ্বান শুভেন্দুর
শুভেন্দু অধিকারী মাত্র দুই দিনের প্রচারেও পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্র ঘুরে এসেছেন—গ্রেটার কৈলাস, নজফগড়, ঘোন্ডা, করোল বাগসহ একাধিক এলাকা।
তাঁর প্রচারে সবচেয়ে আলোচিত ছিল ‘মা দুর্গা’র নামে ভোট চাওয়ার কৌশল। তিনি বলেছেন—
“বাঙালিরা মা দুর্গার পূজা করেন। মা দুর্গারই প্রতিভূ হচ্ছেন আমাদের দিদিরা-বোনেরা। তাই প্রত্যেকে আমাদের মাকে, বোনকে, দিদিকে ভোট দিন, মোদীজির হাত শক্ত করুন।”
এছাড়া, ভোটদানে গুরুত্ব দিতে গিয়ে তিনি বলেন—
“পহলে ভোটদান, উসকে বাদ জলপান।”
(সকালবেলা প্রথমে ভোট দিন, তারপর জলখাবার খান)।
বিজেপির প্রচার কৌশলের বিশেষত্ব
✅ পূর্বাঞ্চলীয় ভোটারদের গুরুত্ব বুঝে বাংলা ও বিহারের নেতাদের প্রচারে নামানো
✅ বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তুলে ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করার চেষ্টা
✅ ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে দুর্গানামের সঙ্গে নারী ভোটারদের সংযুক্ত করার কৌশল
এই প্রচার কতটা সফল হবে?
দিল্লির রাজনীতিতে বাঙালি ভোট কখনোই মূল ফ্যাক্টর ছিল না, কিন্তু এবার বিজেপি সেটাকে কাজে লাগাতে চাইছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপির কৌশল সফল হবে কিনা তা বোঝা যাবে ৮ ফেব্রুয়ারির ভোটের ফলাফলের পরেই। তবে একথা স্পষ্ট, দিল্লির নির্বাচন এবার শুধু জাতীয় ইস্যু নয়, প্রাদেশিক রাজনীতির মোড় ঘোরানোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
শাড়ি-পাঞ্জাবিতে অঞ্জলি, দুরুদুরু বুকে প্রেমপ্রস্তাব, বসন্ত-বিলাস, আফসোস আর সরস্বতী বন্দনা