দিল্লির বেহাল দশা নিয়ে রাহুলের কটাক্ষ
সোমবার, উত্তর-পূর্ব দিল্লির সীলমপুরী এলাকায় এক জনসভায় রাহুল গান্ধী দিল্লির বর্তমান অবস্থা নিয়ে মুখ খুললেন। এই মুসলিম ও ওবিসি অধ্যুষিত অঞ্চলে কংগ্রেসের সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি সরাসরি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান। তাঁর অভিযোগ, কেজরীওয়াল যে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাস্তবিক তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
সীলমপুরীর জনসভায় রাহুল গান্ধী এক নোংরা নালার পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “দেখুন, এটাই কেজরীওয়ালের দিল্লি। প্যারিস বানানোর কথা বলেছিলেন, আর এখানে কী অবস্থা! একদিকে নোংরা আবর্জনার স্তূপ, অন্যদিকে ধস ঠেকাতে অস্থায়ী মাটি ফেলা হয়েছে। এই হল উন্নয়নের নামে ঠকানোর আসল ছবি।”
মুসলিম ও অনগ্রসর ভোটারদের টার্গেট
সোমবার সীলমপুরীতে সভা করার পর, মঙ্গলবার রাহুল গান্ধী পৌঁছালেন উত্তর-পশ্চিম দিল্লির রিঠালা এলাকায়। এখানে মূলত বিহার এবং পূর্ব উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা পূর্বাঞ্চলীয় ভোটারদের বাস। রাহুল এই এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে সময় কাটান এবং মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে তাঁদের সঙ্গে দই-চিঁড়েও ভাগ করে খান। এর মাধ্যমে তিনি একদিকে মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বার্তা দিতে চেয়েছেন, অন্যদিকে দিল্লির ভোটের ময়দানে সংখ্যালঘু ও অনগ্রসর শ্রেণির ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর কৌশল নিয়েছেন।
রাহুলের এই জনসংযোগ অভিযানে মূল লক্ষ্য, কেজরীওয়ালের মুসলিম ও অনগ্রসর ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসানো। কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাহুলের এই প্রচার কৌশল ১২ থেকে ১৫ শতাংশ ভোট টানার চেষ্টা করবে। দিল্লির বিধানসভা ভোটে এটাই হতে পারে কংগ্রেসের নতুন করে শক্তি অর্জনের এক বড় পদক্ষেপ।

জাতিগণনা ও সংরক্ষণ নিয়ে কেজরীওয়ালের নীরবতা
জনসভায় রাহুল গান্ধী কেজরীওয়ালের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, বিশেষত জাতিগণনা নিয়ে। রাহুল বলেন, “জাতিগণনা হলে ওবিসি এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণিগুলোর প্রকৃত সংখ্যা বোঝা যাবে। এর মাধ্যমে তাঁদের অধিকার ও সংরক্ষণের সুযোগ নিশ্চিত করা যাবে। তবে কেজরীওয়াল এই প্রশ্নে সবসময় নীরব।”
এখানেই শেষ নয়। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ কেজরীওয়ালের একটি পুরনো মন্তব্য তুলে আনেন, যেখানে তিনি সংরক্ষণের বিরোধিতা করেছিলেন। ওই মন্তব্যে কেজরীওয়াল বলেছিলেন, “যাঁরা একবার সংরক্ষণের সুবিধা পেয়েছেন, তাঁদের আর সংরক্ষণ পাওয়া উচিত নয়। এমনকি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিদেরও সংরক্ষণ প্রয়োজন নেই।” কংগ্রেস নেতারা এই মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, সংরক্ষণ সমাজে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির উন্নতির জন্য, এবং এই বিষয়ে কেজরীওয়ালের অবস্থান স্পষ্ট নয়।
দিল্লির ভোটে কংগ্রেসের লক্ষ্য
এই জনসভাগুলোর মাধ্যমে কংগ্রেস দিল্লির বিধানসভা ভোটে নিজের পায়ের তলায় মাটি শক্ত করার চেষ্টা করছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা কংগ্রেস, কেজরীওয়ালের ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। মুসলিম ও অনগ্রসর শ্রেণির ভোটারদের দলে টানতে রাহুল গান্ধীর দই-চিঁড়ে ভাগ করার প্রতীকী বার্তা স্পষ্ট।
কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে রাহুলের আক্রমণ
রাহুল গান্ধীর সরাসরি আক্রমণ কেজরীওয়ালের প্রতি দিল্লির রাজনৈতিক উত্তাপকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তাঁর কথায় উঠে এসেছে দিল্লির রাস্তাঘাট, নালা এবং অবৈধ নির্মাণের সমস্যা, যা উন্নয়নের অভাবকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। তিনি বলেন, “এখানে মানুষ ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসে কেজরীওয়াল এই অবস্থা তৈরি করেছেন। এই দিল্লি কি প্যারিসের সঙ্গে তুলনীয়?”
রাহুলের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, এই আক্রমণাত্মক অবস্থান তাঁদের রাজনৈতিক পুনরুত্থানের সুযোগ এনে দিতে পারে। দিল্লির সংখ্যালঘু এবং অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ কংগ্রেসের এই নতুন প্রচারনীতিতে সাড়া দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
উপসংহার
রাহুল গান্ধীর এই কৌশল মূলত দিল্লির ভোটারদের মধ্যে কেজরীওয়াল সরকার সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে ধরার প্রয়াস। সংখ্যালঘু, ওবিসি এবং পূর্বাঞ্চলীয় ভোটারদের দলে টেনে কংগ্রেস দিল্লির রাজনৈতিক মঞ্চে নিজের পুরনো অবস্থান ফিরে পেতে মরিয়া। এখন দেখার বিষয়, রাহুলের এই প্রচেষ্টা আসন্ন দিল্লি বিধানসভা ভোটে কতটা প্রভাব ফেলে।
সত্যিকারের সাধ্বী নাকি শুধুই লোকদেখানো! নেটপ্রভাবী হর্ষা রিচারিয়া নিয়ে কেন এত বিতর্ক?

