দিল্লির বিষাক্ত বাতাসে বাড়ি থেকেই কাজ করবেন ৫০ শতাংশ সরকারি কর্মচারী
দিল্লিতে বর্তমানে যে বিপজ্জনক পরিবেশ পরিস্থিতি চলছে, তা জনস্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। গত কয়েক দিন ধরে, দিল্লির বাতাসের গুণমান সূচক (AQI) ৪৫০ ছাড়িয়ে গেছে, যা ‘অতি ভয়ানক’ হিসেবে বিবেচিত। মঙ্গলবার বাতাসের গুণমান সূচক পৌঁছেছিল ৪৯৪-এ, যা এই মরসুমে সর্বোচ্চ। এই অবস্থায়, দিল্লি সরকার দূষণ কমানোর জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ৫০ শতাংশ সরকারি কর্মচারীকে বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বুধবার থেকেই। দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই এই পদক্ষেপের ঘোষণা করেন। তিনি জানান, বুধবার দুপুরে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে দূষণ কমানোর আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
দিল্লির দূষণ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশমন্ত্রী। ইতিমধ্যে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃত্রিম বৃষ্টির আবেদন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি। দূষণের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে। বিশেষ করে বাচ্চারা, বৃদ্ধরা এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা থাকা ব্যক্তিদের জন্য পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
এর পাশাপাশি, দিল্লির সমস্ত স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস চালু করা হয়েছে, যেন শিক্ষার্থীরা বাইরে না বেরিয়ে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারে। ট্রেন এবং বিমান পরিষেবাও প্রভাবিত হয়েছে, বেশ কিছু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে এবং বিমানের চলাচলেও কিছু ব্যাঘাত ঘটেছে।
এছাড়া, রাজধানীতে জিআরএপি ৪ (গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান) চালু করা হয়েছে, যা দূষণ নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ স্তরের পদক্ষেপ। এই নিয়ম অনুযায়ী, শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া অন্য কোনও ট্রাক দিল্লি ও তার আশেপাশে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে বৈদ্যুতিন গাড়ি, ডিজেল চালিত বিএস ৬, সিএনজি এবং এলএনজি চালিত ভারী গাড়িকে এই বিধি থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দিল্লির বাতাসের গুণমান সূচক এখন ৪২২-এ নেমে এলেও, পরিস্থিতি এখনও বিপজ্জনক। বুধবার সকালে দিল্লির আকাশে ঘন ধোঁয়াশা ছড়িয়ে ছিল, যা শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা বাড়িয়েছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই ধরনের পরিস্থিতিতে দীর্ঘসময় থাকলে শ্বাসযন্ত্রের গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে, এমনকি হৃদযন্ত্রের সমস্যা বাড়ানোরও আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, নির্মাণকাজও পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে দিল্লিতে। সুপ্রিম কোর্টও এই বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে এবং নির্দেশ দিয়েছে যে, আদালতের অনুমতি ছাড়া দূষণ নিয়ন্ত্রণের বিধি শিথিল করা যাবে না।
দিল্লির পরিবেশ পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য সরকারের এই পদক্ষেপগুলি যদিও সময়োপযোগী, কিন্তু সঠিক সমাধান হিসেবে এগুলি স্থায়ী নয়। নাগরিকদের কাছে সরকারের আবেদন, যতটা সম্ভব বাড়ির ভিতরেই থাকুন এবং বাইরে বেরোলে মাস্ক ব্যবহার করুন।