দিল্লির দূষণ
দিল্লির বায়ুদূষণ মঙ্গলবার পৌঁছেছে বিপজ্জনক পর্যায়ে। সকাল থেকে রাজধানী এবং সংলগ্ন অঞ্চলগুলো পুরু ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে যায়। বাতাসের গুণমান সূচক (AQI) ৪৯৪-এ পৌঁছায়, যা এই মরসুমের সর্বোচ্চ। সাধারণত ৪৫০-র উপরের AQI ‘অতি ভয়ানক’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
দূষণ পরিস্থিতি ও কড়া ব্যবস্থা
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে দিল্লি সরকার সোমবার থেকে ‘গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান ৪’ (GRAP-4) কার্যকর করেছে। এই সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার আওতায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া অন্য কোনো ভারী যান রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারবে না। নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডিজ়েল চালিত বিএস-৬ যানবাহন, বৈদ্যুতিক ও সিএনজি যানবাহন কিছু ক্ষেত্রে ছাড় পাচ্ছে।
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, দূষণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এই পরিকল্পনা শিথিল করা যাবে না। কোর্ট আরও প্রশ্ন তোলে, এতদিন ধরে পরিস্থিতি অবনতি সত্ত্বেও সরকার পদক্ষেপ নিতে কেন দেরি করল।
শিক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভাবিত
বায়ুদূষণের কারণে দিল্লির সব স্কুল ও কলেজে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের গুরুগ্রাম ও নয়ডার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এই নিয়ম চালু হয়েছে।
দূষণজনিত কারণে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় ট্রেন ও বিমান পরিষেবায়ও প্রভাব পড়েছে। দিল্লিতে অন্তত ২২টি ট্রেন দেরিতে চলেছে এবং ৯টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। বিমান সংস্থাগুলিও যাত্রীদের দেরির পূর্বাভাস দিয়েছে।
বায়ুর মান ও স্বাস্থ্যঝুঁকি
বাতাসের গুণমান সূচক (AQI) ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে তা ‘ভাল’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৪০১-৪৫০-র মধ্যে থাকলে ‘ভয়ানক’ এবং ৪৫০-র বেশি হলে ‘অতি ভয়ানক’। মঙ্গলবার সকাল থেকে দিল্লির বেশিরভাগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে AQI ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি কম দূষিত অঞ্চলের AQI ৪৮০-র কাছাকাছি।
এই দূষিত বায়ু দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ এবং অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষজ্ঞরা শিশু, বৃদ্ধ এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
দিল্লির বায়ুদূষণ পরিস্থিতি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দূষণ রোধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তার প্রভাব এখনও পরিলক্ষিত হয়নি। দূষণের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মোকাবিলায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।